একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সমাধানে আরেকটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বোঝাতে ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। রোববার বিকেলে রাজধানীর হোটেল আমারিতে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ভালো আলোচনা হয়েছে। ভোটের দিন কী হয়েছে সে বিষয়ে আমরা তাদের বলেছি। কী ঘটেছে তা তারা দেখেছেন। এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। নির্বাচনের অনিয়মের তথ্য আমরা তাদের সামনে তুলে ধরেছি।’ বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারসহ যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, কোরিয়া, সুইডেন, স্পেন, জার্মানি, নরওয়ে, ভারত, পাকিস্তান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ ৩০টিরও বেশি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের অনিয়ম ও নির্বাচনের আগে এবং পরের ঘটনা তুলে ধরেন। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সারা দেশে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে কথা বলেন। কূটনীতিকদের কাছে ভোটের নানা অনিয়মের একটি ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া, ভিডিওর সিডি ও তথ্য প্রমাণের কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়।
বৈঠক শেষে ড. কামাল বলেন, নির্বাচনের অনিয়ম ও সহিংসতার তথ্য উপাত্ত আমরা কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেছি। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে আমরা তাদের যেগুলো বলেছি, যেসব তথ্য দিয়েছি। তারা সেগুলো দেখেছেন এবং অ্যাকসেপ্ট করেছেন। আমরা বলেছি, সব রাষ্ট্র আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। উনারাও বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল চেয়েছেন। এ দেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে থাকতে পারে, শান্তিশৃঙ্খলা থাকে ও আইনের শাসন থাকে সেটাই চেয়েছেন।
‘কূটনীতিকরা আমাদের জন্য যেটা চান আমরাও সেটাই চাই’, যোগ করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা।
ড. কামাল হোসেন বলেন, মানুষের মতামত যাচাই করলে দেখা যাবে তারাও চায়- দেশে শান্তি শৃঙ্খলা থাকুক। মানুষ কাজ-কর্ম করে বেঁচে থাকুক। প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ভালোমতো নির্বাচন হলে এই জিনিসটাই প্রতিষ্ঠা করা যেত। এখন আমাদের কথা হলো, নির্বাচনে যা হয়েছে, হয়েছে। এখন একটা ভালো নির্বাচন দিয়ে একটা সুন্দর সমাজ গড়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
ড. কামাল আরো বলেন, আমরা কূটনীতিকদের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার আবেদন রেখেছি। তারা না বলেননি। আমরা বলেছি, সবাই যেন গঠনমূলক একটি ভূমিকা রাখতে পারি সেই জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ না হলেও তো যুক্তি দিয়ে বুঝাতে পারেন।
এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় কূটনীতিকদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বৈঠক শুরু হয়। চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেওয়া বিএনপি প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি, আফরোজা আব্বাস, কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা অংশ নেন।
সূত্র : এন টি ভি