রাজনীতি কৌশলের খেলা। এই খেলায় বি এন পি বার বার পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে। বি এন পি চেয়েছিল বর্তমান সরকারকে আন্দোলন সংগ্রাম করে পদত্যগে বাধ্য করাতে। একটি তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিল বি এন পি। তাদের এই আন্দোলনকে বেগবান করতে বিদেশী প্রভুদের সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু জনগনের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোন কালে আন্দোলন করে লক্ষ্য আদায় করা যায়নি।
সরকার পতনের মত আন্দোলনে শরীক দলের সম্পৃক্ততাও জরুরী। বি এন পি এই দুই পক্ষকেই অগ্রাহ্য করেছে। বি এন পিকে পেছন থেকে উৎসাহ যোগিয়েছে কুটনৈতিক পাড়া। তাদের নিত্য অভিযোগ শুনে বি এন পি এতটাই বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল যে সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছে নেতারা। সরকার পদত্যাগ করলে কে কিভাবে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাবে তা’ও প্রচার করেছে বি এন পি নেতারা। তারেক জিয়া লন্ডন থেকে সরকারী কর্মকর্ত্তা কর্মচারী আর পুলিশদের হুশিয়ারী দিয়েছেন যেন কেউ সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ না করে। দলের উৎফুল্ল নেতা কর্মীরা এই বিশ্বাস ধারন করে সরকারের পতন নিশ্চিত ভেবেছিল। এই আন্দোলন করে বি এন পি জনগনের কাছেও একটি অবস্থান সৃষ্টি করে ফেলেছিল। দলের সেই সেই অবস্থানটি ধরে রাখতে পারেনি বি এন পি।
✪ আরও পড়ুন: নির্বাচন-২৪
✪ আরও পড়ুন: নির্বাচন
✪ আরও পড়ুন: আবারও রাজনীতিতে শুন্যতা
✪ আরও পড়ুন: আবারও অবরোধ
অমুক তারিখে খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ পরিচালিত হবে, অমুক তারিখে তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন-এসব কোন কথাই সত্য প্রমাণিত হয়নি। বরং নেতাদের মিথ্যা বক্তব্য হাস্যরসের খোড়াক হয়েছে। দলটিতে বেগম জিয়ার যে একক আধিপত্য ছিল সেই নেতৃত্বটিই কেউ দেখাতে পারেনি। তারেক দলের কর্তৃত্ব পেয়েও নিজেকে অনভিজ্ঞ প্রামান করেছে। দল পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। তার অশোভন বক্তব্য আর ব্যক্তিগত আচরন অনেক নেতাকর্মীকে নিস্ক্রিয় করে দিয়েছে। কেউ কেউ দল থেকে বহিষ্কৃতও হয়েছেন। নির্বাচন বর্জন করা ছিল দলটির জন্য ছিল বড় ভুল। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল পরিস্কার।
জনগন ক্ষমতাসীন দলের উপর নানা কারনে বিরক্ত। জনগনের এই বিরক্তি বি এন পি তাদের দলের পক্ষে নিতে পারলে নির্বাচনে ভাল করতে পারত। বি এন পি সরকার গঠন করতে না পারলেও একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হতে পারত। ক্ষমতায় না গিয়েও সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারত। কিন্তু বি এন পি নেতারা ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। ক্ষমতায় যেতে জনগনকে বাদ দিয়ে বিদেশীদের উপর বেশী বিশ্বাসী হয়েছে। নেতারা মনে করেছিল বিদেশী চাপে সরকার তাদের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হবে। দেশে বি এন পি’র পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু তত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বিপক্ষে বিভাজন ছিল। জাতীয় পার্টি সংসদে কিংবা বাইরে বিরোধী দলের কোনই ভুমিকা রাখতে পারেনি। জাতীয় পার্টি সরকারের আজ্ঞাবাহ বিরোধী দল হয়ে যে শুন্যতা দেখিয়েছে। বি এন পি সেই সুযোগটিও ঘরে তুলতে পারেনি।
✪ আরও পড়ুন: অবরোধ
✪ আরও পড়ুন: কোন পক্ষটি সমর্থন করবে!
✪ আরও পড়ুন: বি এন পি’র রাজনীতি
✪ আরও পড়ুন: বিএনপি দলের এক দফা
আওয়ামী লীগ পুরনো দল এবং তাদের অভিজ্ঞতা দিয়েই বি এন পি’কে ভুল করার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই ভুলের শিকার হয়েই ২৮ শে অক্টোবর মহাসমাবেশ ছেড়ে বি এন পি’র নেতারা মঞ্চ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সন্ত্রাসী তান্ডবতা দমন করতে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে নেতাকর্মীদের। দলের নেতারা কর্মীবাহিনীকে এড়াতে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে পুলিশের কাছে। এখন দলটি নেতৃত্বহীন। মাঠ কর্মীদের আস্থাটি নেতাদের উপর থাকেনি আর। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নেতাশুন্য হয়ে গেছে। অথচ এই সময়টাতেই দল সংগঠিত হয় নির্বাচনের জন্য। নেতারা সুযোগটি হাত ছাড়া করেছে। বি এন পি’র মাঠ কর্মীরা যেভাবে উজ্জীবিত হয়েছিল নির্বাচনে গেলে দলটি ঘুরে দাড়াতে পারত। নির্বাচন বর্জন করে সেই সুযোগটি হাতছাড়া করেছে বি এন পি। এখন দলের যে অবস্থা তাতে দাবী আদায় তো দুরের কথা দলের সিদ্ধান্ত দেওয়ারও কেউ নেই। নির্বাচনমুখী নেতারা কার ভরসায় অপেক্ষা করবে? দলের অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। ভোটারের উপস্থিতি যদি উল্লেখযোগ্য পরিমান হয় তাহলে এই নির্বাচন গ্রহনযোগ্য বলেও বিবেচিত হয়ে যাবে।
✪ আরও পড়ুন:গণতন্ত্র
✪ আরও পড়ুন:বিদেশী প্রেস্ক্রিপশনে শেখ হাসিনা চলেননা
✪ আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক চরম দু:সময় চলছে
✪ আরও পড়ুন: যুদ্ধটি সহজ হবে না!
এমনটি হলে আগামি ৫ বছর দলটির পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হবে। রাজনীতি ভুলের খেলা। বি এন পি নেতারা আওয়ামী লীগের নিরবতাকে দুর্বল ভেবে বার বার ভুল করেছে। আর রাজনীতির ভুল সংশোধন করা যায় না। ২৮শে অক্টোবরের ঘটনায় বিদেশীরাও আর বি এন পি’র পক্ষে কথা বলছেনা। ইতিমধ্যে বি এন পি বিভক্ত হয়ে নতুন দল এবং জোট গঠন করে ফেলেছে। নির্বাচনে এই দলের কে কত আসন পাবে তা মূখ্য নয় কিন্তু দলের বিভক্তি এখন বাস্তবতা। যারা এখনো দলের পক্ষে বিরামহীন কথা বলছেন তারাও কতদিন এই অবস্থানে থাকবে কেউ জানেনা। অবশেষে দলটি ভেঙ্গেই গেল (অনেক আগেই এই ভবিষ্যত বানীটি পড়েছি কাগজে)। এই দল ভাঙ্গায় ক্ষতির হিসাবটি যাদের করার করুক কিন্তু দেশের সুষ্ঠ রাজনীতির ধারাটি ব্যাহত হল সে কথা বলাই বাহুল্য।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৭:০৮ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি