বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে মহামারী করোনা ভাইরাস। ফলে তলানিতে নেমে এসেছে তেলের চাহিদা। তাই যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের বাজারে নেমেছে ধস। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্রুড ওয়েল অর্থাৎ অপরিশোধিত তেলের দাম শূন্যের নিচে নেমে গেছে অর্থাৎ নেতিবাচক সূচকে চলে গেছে।
রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২০ এপ্রিল) নজিরবিহীন এই পরিস্থিতির মধ্যে যখন বাজার শেষ হল, তখন ফিউচার মার্কেটে মে মাসে সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল মাইনাস ৩৭.৬৩ ডলার। অর্থাৎ তখন ক্রেতাকে প্রতি ব্যারেল তেলের সঙ্গে এই পরিমাণ অর্থও দিতে রাজি ছিলেন উৎপাদকরা। এছাড়াও চাহিদা না থাকা ও উৎপাদন অব্যাহত থাকায় মে মাসেই তেল মজুদের আর জায়গা থাকবে না। এমন আশঙ্কা থেকেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের ব্র্যান্ড ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমেডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম মঙ্গলবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ইতিবাচক পর্যায়ে উঠে। বিশ্ব মান সময় ৩টা ৫৬ মিনিটে ৩৯ ডলার পুনরুদ্ধার হয়ে এই তেল ১.৩৭ ডলারে বিক্রি হয়।
মে মাসে সরবরাহের জন্য তেল কেনাবেচার চুক্তি করার সময় মঙ্গলবারই (২১ এপ্রিল) শেষ হবে। এর মধ্যেই জুনে সরবরাহের জন্য এই তেলের দাম ৯৬ সেন্ট বা ৪.৭ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ২১.৩৯ ডলারে উঠে।
এদিকে জুনে সরবরাহের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ব্রেন্টের দাম ২০ সেন্ট বা ০.৮ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ২৫.৩৭ ডলারে নেমে আসে। বাজার বিশ্লেষক অ্যাডওয়ার্ড মোয়া বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট তেলের চাহিদা বিপর্যয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চালুর গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে ধীর হবে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে লকডাউনের মধ্যে বিশ্বের বহু দেশের মানুষ এখন ঘরবন্দি থাকায় সব সড়ক ফাঁকা, উড়োজাহাজগুলো বসে আছে, কারখানাগুলোও অন্ধকার। একারণে গত তিন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৩০ শতাংশ কমেছে। ফলে প্রতিদিনই কোটি কোটি ব্যারেল তেল গুদামে জমছে, অদূর ভবিষ্যতে তেল রাখার কোনো জায়গা থাকবে না। মে মাসের আগেই গুদাম, শোধনাগার, টার্মিনাল, জাহাজ, পাইপলাইন- সবগুলোর ধারণক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওকলাহোমার কাশিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রধান গুদাম ও সরবরাহ কেন্দ্রে তেল রাখার জায়গা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।তেলের দরে ঐতিহাসিক পতনের পর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোদি আরব থেকে তেল আমদানি আপাতত বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানান।
এমন পরিস্থিতিতে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সমিতি অ্যাপেক ও রাশিয়াসহ এর মিত্ররা দিনে ৯৭ লাখ ব্যারেল করে তেলের উৎপাদন কমাতে রাজি হয়েছে। তবে সেটা মে মাসের আগে হচ্ছে না এবং যে পরিমাণ উৎপাদন কমবে তা বাজারে ভারসাম্য আনার জন্য যথেষ্ট না।