নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এবং জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এই দুজন ছাড়াও আক্রান্ত অপর তিনজন হলেন- জেলা সদরের বেসরকারি হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক এবং ৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের একজন চিকিৎসক।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ এই পাঁচজনের করোনা নমুনা পরীক্ষা পজেটিভ এসেছে বলে পৃথকভাবে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন সেলিম রেজা, সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসাদুজ্জামান ও শহরের ৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সামসুদ্দোহা সঞ্জয় সহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা।
গত ৪ এপ্রিল (শনিবার) নারায়ণগঞ্জে প্রথম একটি বেসরকারি ক্লিনিকের একজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হন। তিনি নিয়মিত সেই ক্লিনিকে রোগী দেখতেন। হঠাৎ করে তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরে তার নমুনা পরীক্ষা করলে তার করোনা শনাক্ত হয়। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৮ এপ্রিল (বুধবার) করোনায় আক্রান্ত হন নারায়ণগঞ্জ জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন ডা. জাহিদুল ইসলাম বিভিন্ন সময় নমুনা সংগ্রহের জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন এবং করোনা বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় তিনি করোনা আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার করোনা শনাক্ত হয়।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) করোনা আক্রান্ত হন নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। মেডিসিন কনসাল্টেন্ট (৪২) এই চিকিৎসকের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী তিনি করোনা পজিটিভ। একইদিন নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালের এনেসথেসিস্ট (৪৫) বিষয়ক একজন চিকিৎসকের শনাক্ত করা হয়।
সর্বশেষ শনিবার (১১ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমতিয়াজের করোনা শনাক্ত করা হয়। নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হন তিনিও।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তিনি টেলিফোনে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। শুক্রবার পরীক্ষায় তাঁর করোনা ‘পজিটিভ’ আসে।
জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করবেন নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত ১০০’ শয্যার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসাদুজ্জামান। তিনি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সামসুদ্দোহা সঞ্জয় বলেন, তার হাসপাতালের ৪২ বছর বয়সী এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁকে চিকিৎসকেরা কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ছাড়া শহরের সিটি লাইফ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক (৪৫) পরীক্ষায় করোনা ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন তার বাংলাতে কোয়ারেন্টিনে আছেন। তিনি জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) সেলিম রেজা জানান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন আগে থেকেই কোয়ারেন্টিনে আছেন। তিনি নিজের বাংলোতে অবস্থান করছেন। অফিসে আসছেন না। অবশ্য, তার করোনা পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ আসে বলে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নার্স, ওয়ার্ডবয় ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৫ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন।