হামার দেখার কায়ো নাই পোত্তেকবারে পানিত ডুবি থাকা নাগে, আর তোমরাগুলা আইশেন ছবি তুলবার, ছবি তুলি কি করেন এগলা দেখাইলে মানষে আরো তামাষা দেকে খালি, কায়ও আগে আইষে না, খালি এক-দুইবার আসি মিচ্চাএকনা চিড়ামুড়ি দেয় তাও ছবি তুলি নিয়া যায়, ওগলা হামার নাগবার নয় ‘হামার ঘরবাড়িত পানি যেন না ওঠে সেই কাম করো’ এমনই ক্ষোভ রেখে কথাগুলো বলছিলেন বন্যার কবলে পড়া পানিবন্দি গঙ্গাচড়া উপজেলার বাসিন্দা, প্রতিবার পানিবন্দি হতে হয় তাদের। তারা কোনো ত্রানসামগ্রী চান না, চায় এর স্থায়ী সমাধান।
কয়েকদিনে ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ফলে হু হু করে ফেঁপে উঠেছে তিস্তা নদী। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়ার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙন, আতঙ্কে কাটছে তাদের নির্ঘুম রাত।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি এবং বিশেষ করে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার আশপাশের রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, চরইচলী, বাগেরহাট, কোলকান্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, বিনবিনা , চর মুটুকপুর ,নোহালী ইউনিয়নের বাগডোহরা, চর নোহালী,কচুয়া এলাকার চরাঞ্চলসমুহ তলিয়ে গেছে। মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়া চর ,আলালের চর, নিলারপাড়, গজঘণ্টা ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নঅঞ্চলের বিস্তীর্ন এলাকায় প্লাবিত হয়ে অন্তত আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফসলিজমিতে পানি উঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম আমন ধান, বাদাম, মরিচ ও শীতকালীন শাকসবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ গবাদিপশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ। ভাঙ্গনের ঝুঁকিরমাঝে পড়েছে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বন্যার আতঙ্কে এসব এলাকার মানুষের নির্ঘুম রাত কেটেছে। চরম দুর্ভোগে পড়ছে বানভাসি মানুষগুলো। পানিবন্দি পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। আর এই নিয়ে ৮ম বারের মতো বন্যার কবলে পড়ল তিস্তাপাড়ের মানুষ।
লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন , তার ইউনিয়নের শংকরদহ, ইচলি ও বাগেরহাট এলাকায় ৩’শ এর বেশি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
মর্নেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪”শ পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের পানিবন্দীর সংখ্যা ২ হাজারের মতো। শনিবার আমরা লক্ষীটারী ইউনিয়নে ১০০ পরিবারকে শুকনা খাবার দিয়েছি। সোমবার কোলকোন্দ, লক্ষীটারী, নোহালী ইউনিয়ন ১ হাজার ২৫০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, পানিবন্দিদের শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার আছে পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হবে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:৩৮ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি