সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৬ বছর বয়সী ছোট্ট শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন কে আক্রোশের জেরে হত্যা করে তারই গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার। আর এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন তার মা। রোববার ভোরে শিশুটি মরদেহ মার্জিয়ার মা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। নিহত মুনতাহা কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।কিন্তু কেন কি কারনে জীবন দিতে হলো এমন প্রাণচঞ্চল শিশুটিকে?
এ ঘটনায় শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও নানি কুতুবজান বিবিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া আরো সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ছয়জনকে আইনের আওতায় আনা হলো।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিল মুনতাহা। সেখান থেকে ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায়। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে প্রকৃতপক্ষে শিশু মুনতাহা মাগরিবের নামাজের আগে একটি আপেল খেতে খেতে মার্জিয়ার ঘরে প্রবেশ করে। প্রবেশ করতেই মার্জিয়া ভিকটিম মুনতাহার গলাটিপে ধরে। গলাটিপে ধরার সঙ্গে সঙ্গে সে মারা যায়। মুনতাহার লাশ মার্জিয়া ও তার মা মিলে বাড়ির পেছনের একটি ডোবায় পুঁতে রাখে। তবে প্রতিবেশী মর্জিনার কথাবার্তায় সন্দেহ দেখা দিলে এ সপ্তাহের গত শনিবার রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে মর্জিনার মা অলিফজান রাত ৪টার দিকে ডোবা থেকে মুনতাহার লাশ তুলে পাশের পুকুরে ফেলে দিতে যাচ্ছিল। এ সময় স্থানীয়রা সেটি দেখে তাকে আটকে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা আলিফজানের ঘরে আগুন দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের নিবৃত্ত করে।
পুলিশ জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীর কাদায় লেপ্টে ছিল। গলায় রশি জাতীয় কিছু পেঁচানো ছিল।
মার্জিয়ার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো রফিকুল ইসলাম জানান, গত ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ডোবায় ফেলে রাখা হয়। মার্জিয়াকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ ও তার ওপর চুরির অপবাদ দেওয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে এ ঘটনায় আর কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তিনি আরো জানান, মুনতাহা হত্যাকাণ্ডে মার্জিয়া, তার মা ও নানি ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরো তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- নিজাম উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগম। হত্যাকাণ্ডে আরো কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা উদঘাটন করতে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এ হত্যার রহস্য জানানো যাবে।
রোববার (১০ নভেম্বর) বাদ আসর জানাজার নামাজ শেষে বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আজ ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:১৯ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি