জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লেখা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্পাদনায় ২০১২ সালের জুনে প্রকাশিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে উল্লেখিত হেকিম খলিলুর রহমান বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ‘খলিল ভাই’ জুরাইন মাজার শরীফের কবরস্থানে সমাহিত আছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি জুরাইন চিশতিয়া মাজার শরীফ-এর মোতওয়াল্লী শাহজাদা সহিদুর রহমান সেলিম মাজার শরীফের পারিবারিক সংকট নিরসনে সহায়তার আশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত চিঠিতে জুরাইন মাজার শরীফের সাথে বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা বর্ননা করতে গিয়ে হেকিম খলিলুর রহমানের এ বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন।
জুরাইন চিশতিয়া মাজার শরীফ-এর মোতওয়াল্লী শাহজাদা সহিদুর রহমান সেলিম জানান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জুরাইন মাজার শরীফ এর সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ভক্তবৃন্দের বিশ্রামের জন্য নির্মিত ভবনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর তিন সন্তান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও শেখ কামাল। এ সময় তারা ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন হেকিম খলিলুর রহমানের মেঝ ভাই সাইদুর রহমানের বাসায় গিয়েছিলেন। সাইদুর রহমান জুরাইন মাজার শরীফের পীর সাহেবের বড় মেয়ের স্বামী, যিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাও ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র ৪ দিন পূর্বে পাকসেনারা তাঁকে তুলে নিয়ে যায়, তিনি আর ফিরে আসেননি। ২০০২ সালে হেকিম খলিলুর রহমানের বড় বোনের স্বামী ও কাজী মঈনুদ্দিন মুনীর-এর পিতা কাজী শামসুজ্জোহা সাহেবের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুরাইন মাজার শরীফ আঙ্গিণাস্থ বাসায় এসেছিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেছিলেন। আর আমরা জানতাম না যে, এই জুরাইন মাজার শরীফের পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয় হেকিম খলিলুর রহমান, প্রিয় ‘খলিল ভাই’। মহান আল্লাহ খলিলুর রহমানকে জান্নাতবাসী করুন এই দোয়া করি।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে হেকিম খলিলুর রহমান সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, কিন্তু সকলের প্রিয় ‘খলিল ভাই’ এর অকাল মৃত্যুর ঘটনার রহস্য অজানাই রয়ে গেছে। তবে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর সেই প্রিয় হেকিম খলিলুর রহমান খলিল ভাই খুব অল্প বয়সে পারিবারিক হিংসার শিকার হয়ে ১৯৫৪ সালের ৬ অক্টোবর আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
বঙ্গবন্ধুর সেই প্রিয় হেকিম খলিলুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি ছিল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কাশিমপুরে। তিনি পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগ ঘরানার লোক ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে এক সমাবেশে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কাশিমপুরে এসেছিলেন। সেই সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করতে আব্বাসউদ্দীন সহ অনেক বিখ্যাত শিল্পীরা এসেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ‘খলিল ভাই’ সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, “অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ সম্মেলন” এ যোগদান করতে কলকাতা থেকে হাওড়া হয়ে দিল্লী রওয়ানা হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সফরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী ছিলেন কলকাতাস্থ ইসলামিয়া কলেজ ইউনিয়নের তৎকালীন সেক্রেটারি জনাব আশরাফ উদ্দিন মাখন। দিল্লী পৌঁছে তাঁরা এ্যাংলো এ্যারাবিয়ান কলেজ প্রাঙ্গণে তাদের জন্য রক্ষিত নির্দিষ্ট তাবুতে অবস্থান করেছিলেন।
এদিকে পরদিন কনফারেন্সস্থল ছিল লোকেলোকারণ্য, প্রচন্ড গরম। আর প্রথম দিনের কনফারেন্স শেষে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা দিল্লীর লালকেল্লা, জামে মসজিদ, কুতুবমিনার ঘুরে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করে রাতে তাঁবুতে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুক, পেট ও সমস্ত শরীরে ব্যাথা, পায়খানা হয় নাই, প্রচন্ড অস্বস্তি। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে কি হবে এখন? তাদের কাছে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকাও ছিল না । কিছু একটা করা যায় কি না ভেবে আশরাফ উদ্দিন মাখন যখন তাবু থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে মেঘদূতের মত সেখানে হাজির হয়েছিলেন সকলের প্রিয় খলিল ভাই। হেকিম খলিলুর রহমান, আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। ছাত্রলীগের কর্মীও ছিলেন তিনি।
হেকিম খলিলুর রহমান আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাশ করে দিল্লী এসেছেন হেকিম আজমল খাঁ সাহেবের হেকিমি বিদ্যালয় থেকে হেকিমি শিক্ষা নেওয়ার জন্য। তিনি তার প্রিয় শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে এসেছেন। তিনি তখন শেখ মুজিবের অবস্থা দেখে বলেছিলেন, ‘কি সর্বনাশ কাউকে খবর দাওনি’? আর মাখনকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনার ডাক্তার ডাকতে হবে না। আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি’। সেই যাত্রায় প্রিয় খলিল ভাই এর সহায়তায় পরের দিনই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
ডিবিএন/এসডিআর/এমআরবি