ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে গোয়াল ঘরের বাঁশের খুটির সাথে হাত পা বেঁধে এবং মাটিতে ফেলে ৪ দিন যাবৎ বর্বোচিত নির্যাতন করেছে ওই শিশুর নিজ বাবা ও সৎ মা। সেই অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগে গত রবিবার (১৬ এপ্রিল) নির্যাতিত শিশুর বাবা আব্দুল খালেক ও সৎ মা আমিনা বেগমকে গ্রেফতার করেছে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ। এবং এ ঘটনায় ও বাবা- মায়ের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার সেনগাঁও সিন্দুর্না গ্রামের আব্দুল খালেক পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রি। তিনি বিয়ে করেন সাহেরা খাতুনকে। তাদের সংসার জিবনে এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু মেয়ে লাবণী আক্তারকে বিয়ের দেবার পর সে মারা যায়। কন্যা শোকে প্রায় ৮ বছর আগে ছেলে সাহাবুদ্দিনকে রেখে মারা যায় মা সাহেরা খাতুন। সাহেরার মৃত্যুর পর আব্দুল খালেক আমিনা নামে এক নারীকে বিয়ে তরে। খালেক ও আমিনার সংসার জিবনে আমিনার গর্ভে এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। নিজ মা হারা সাহাবুদ্দিন তার পিতা খালেক এবং সৎ মা আমিনার সংসারে নানান প্রতিকূলতার সাথে বড় হতে থাকে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
স্থানীয়রা জানায়, সাহাবুদ্দিনকে তার পিতা আব্দুল খালেক এবং সৎ মা আমিনা কারণে অকারণে প্রায়ই মারধর করত। ঠিক মতো খাবার দিত না। অমানবিক নির্যাতন করত। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হতো সাহাবুদ্দিনকে। কয়েকদিন ধরে সাহাবুদ্দিনের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে তার মামতো ভাই আনোয়ার হোসেন গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) তার খোঁজে ফুফা আব্দু্ল খালেকের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, গোয়াল ঘড়ের ভিতরে একটি বাঁশের খুটির সাথে হাত-পা বেঁধে সাহাবুদ্দিনকে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। কৌশলে আশে পাশের লোকজনের সহায়তায় সাহাবুদ্দিনকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন আনোয়ার। পরে তাকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসা করান এবং থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
আনোয়ার হোসেন জানান, সাহাবুদ্দিন তাকে জানিয়েছেন, চার দিন ধরে তাকে খুঁটির সাথে ওই অবস্থায় হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছিল। এ সময় তাকে খেতেও দেয়া হয়নি। ক্ষুধার জ্বালায় মাটি খেয়েছেন সাহাবুদ্দিন। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়নের কাপড়েই প্রস্রাব-পায়খানাও করেছেন নির্যাতিত সাহাবুদ্দিন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত ভাইরাল হতে থাকে। এতে তৎপর হয়ে উঠেন পুলিশ প্রশাসন। তারা বিষয়টির খোঁজ খবর নেন এবং জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেন। পরে রবিবার ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে ওই কিশোরের বাবা আব্দুল খালেক ও সৎ মা আমিনা বেগমকে গ্রেফতার করেন পুলিশ।
পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ জনক। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ওই শিশুর বাবা এবং সৎ মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মামালা রুজু করে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।