বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মাথা গুজার ঠাঁই দিতে আশ্রয়নের উদ্দ্যেগ নেয় সরকার। আশ্রয়ণ প্রকল্পে একসঙ্গে ১২টি বসতঘর। সেখানে পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও রয়েছে। অথচ সাতটি ঘরই ফাঁকা পড়ে আছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউপি’তে অবস্থিত ‘মুকুন্দপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ দৃশ্যের কথা বলছি।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, মুকুন্দপুর গ্রামে ফানাই নদের তীর ঘেঁষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পৃথক পাঁচটি ঘরে একটি করে ভূমি ও গৃহহীন পরিবার থাকে। আর বাকি সাতটি ঘরে তালা ঝুলছে। বিদ্যুৎ এর লাইন টেনে ১২টি ঘরে মিটারসহ বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে দুটি নলকূপ ও স্থাপন করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে একটি অকেজো পড়ে আছে সাক্ষী হয়ে। প্রকল্পের উপকারভোগীদের কেউ কেউ উঠানে সবজি চাষ করেছেন।
প্রকল্প লাগোয়া একটি বাড়ির উঠানে গৃহস্থালিন কাজ করছিলেন গৃহবধূ সালমা আক্তার। কথোপকথনের এক পর্যায়ে সালমা বলেন, ‘আসল মানুষেরা তো জমি-ঘর পাইছে না। এর লাগি আশ্রয়ণের সাতটি ঘর খালি।’
প্রকল্পের সামনের রাস্তায় দেখা মেলে নেছা বেগম (৫৫) নামের হতদরিদ্র এক বৃদ্ধা নারীর। তাঁর বাড়ি মুকুন্দপুর গ্রামেই। স্বামী নেই। প্রতিদিন মুকুন্দপুরসহ আশপাশের এলাকায় এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করেন। স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে থাকার জন্য দেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাঁর ঠাঁই না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরের জেগায়, পরের ঘরে থাকি। আমার নাম সরকারর কাছে যায় না। একটা ঘর পাইলে হারা জীবন আল্লাহর কাছে দোআ করতাম।’
রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লিটন হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, তিনি ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইউপি সদস্য পদে জয়ী হন। আগের ইউপি সদস্যের দায়িত্বকালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়। শুরু থেকেই প্রকল্পের সাতটি ঘর খালি পড়ে আছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু পরে এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শিমুল আলী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর খালি পড়ে থাকার ব্যাপারে তাঁর জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে কিছু লোক থাকেন না বলে শুনেছি। এরকম লোকের তালিকা তৈরি করে তাদের দলিল বাতিল করা হবে। সেখানে নতুন করে ভূমি ও গৃহহীন সত্যিকার অর্থে ঠিক ঐ পরিবারের তালিকা তৈরি করে তাদের ভূমির দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে।’