ইউরোপের অন্যতম কুখ্যাত মানবপাচারকারী বারজান মাজিদ ওরফে স্করপিয়ন কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার সকালে ইরাকের কুর্দিস্তান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দেশটির জ্যেষ্ঠ একজন সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর- ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে বারজান মাজিদ এবং তাঁর চক্রটি ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ও লরি দিয়ে মানব পাচার ব্যবসার সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন। কুর্দিস্তানের সুলায়মানিয়া শহরে বারজানের খোঁজ পায় বিবিসি। মাজিদ ‘স্করপিয়ন’ নামেও বেশ পরিচিত। তিনি কয়েক হাজার অভিবাসীকে ইংলিশ চ্যানেল পার করিয়েছিলেন।
আরো জানা যায়, স্করপিয়ন ওরফে বারজান মাজিদ এক কুর্দি ইরাকি। মাজিদ নিজেই পাচারের শিকার হয়েছিলেন। সে ২০০৬ সালের ঘটনা। তখন তাঁর বয়স ২০ বছর। একটি লরিতে করে তাঁকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। তবে এক বছর পর তাঁকে দেশটি ছেড়ে যেতে বলা হয়। যদিও আরও কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে থেকে গিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে কিছু সময় নানা অপরাধে কারাগারে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে মাজিদকে ইরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর কিছু সময় পর মানব পাচারের জগতে পা রাখেন তিনি। স্করপিয়ন নামে তাঁর পরিচিত বাড়ে। ধারণা করা হয়, বড় ভাইয়ের হাত ধরেই এ অপরাধে জড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁর বড় ভাই তখন বেলজিয়ামের কারাগারে সাজা খাটছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি বলেছে, “প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার (মাজিদের) মানব পাচারের বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য আমরা বিবিসি’র কাছে কৃতজ্ঞ। যুক্তরাজ্যে যারা মানুষদের পাচার করছেন, তারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, আইনের আওতায় এনে ওইসব চক্রকে নির্মূল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এক ব্যাপারে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের মধ্যে যত মানুষ পাচার হয়েছে, সেটির বেশিরভাগই ‘স্করপিয়ন’ এর চক্র নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। দুই বছর ধরে অভিযান চালিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা চক্রটির অন্তত ২৬ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা পরবর্তীতে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু চক্রটির মূল হোতা মাজিদ, যাকে ‘স্করপিয়ন’ ডাকা হয়, তিনি নিজেই এতদিন গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। যদিও গ্রেপ্তারের আগেই বেলজিয়ামের একটি আদালতে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১২১টি মানব-পাচারের ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে মাজিদ কে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। একই সঙ্গে, নয় লাখ ৬৮ হাজার ইউরো জরিমানাও করা হয়। কিন্তু বিবিসি খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৪:৩০ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি