দেশে চায়ের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি জুন – অক্টোবরে হয়। যদিও চায়ের ভোগের পরিমাণ বাড়তে থাকে অক্টোবর থেকেই। গত নভেম্বরের পর চায়ের চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না বাড়লে আগামী মৌসুমে চায়ের আমদানির সম্ভাবনা দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগ ছিল ৯ কোটি ৩৩ লাখ কেজি। যদিও ওই সময় (২০২১ সালে) চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি। প্রতি বছর চায়ের ভোগ ৪-৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির হিসাবে গত বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি কেজি করা হয়। তবে নভেম্বর পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ কেজি। সর্বশেষ ডিসেম্বরেও এক কোটি কেজির কম চা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের উৎপাদনের চেয়েও অভ্যন্তরীণ ভোগ বেশি হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে চা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক বছর দেশের চায়ের ভোগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চায়ের ভোগ ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ কেজি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ৮ কোটি ৬৬ লাখ কেজিতে উন্নীত হয়। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে ভোগ ছিল ৮ কোটি ৭৩ লাখ কেজি, ২০২১-২২ অর্থবছরে চায়ের বার্ষিক ভোগ ৯ কোটি ৩৩ লাখ কেজি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে চায়ের ভোগের পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ৯ লাখ কেজি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ ঠেকেছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ ২৬ হাজার কেজি, যা বিগত অর্থবছরের দেশীয় বার্ষিক ভোগের ৫১ শতাংশের বেশি।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে চা উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা চলতি মৌসুমে ব্যাহত হয়েছে মূলত চা শ্রমিকের মজুরি ও ধর্মঘটের কারণে। বছরের মাঝামাঝি টানা ২০ দিনের ধর্মঘটের কারণে দেশের চা উৎপাদন কমে যায়। যার কারণে জুলাই ও আগস্টে চা উৎপাদন কমে যায়। জুলাইয়ে আগের বছরের চেয়ে কম অর্থাৎ ১ কোটি ১২ লাখ ৬৭ হাজার কেজি এবং আগস্টে আগের বছরগুলোর তুলনায় কম অর্থাৎ উৎপাদন হয় ১ কোটি ৭ লাখ ৬২ হাজার কেজি। যদিও সেপ্টেম্বর মাসে বিগত কয়েক বছরের চেয়েও রেকর্ড ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরে চা উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার কেজি। যদিও ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছিল ৮ কোটি ৯৫ লাখ ৭৪ হাজার কেজি চা।
চা- বাগান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় চা ভোগ্যতার চেয়েও কম উৎপাদন হলে বাংলাদেশে চায়ের আমদানি বাড়াতেই হবে। তা না হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না।
এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় চা নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন কুমার বর্মণ গনমাধ্যম সূত্রে বলেন, দেশে চায়ের ভোগ প্রতি বছরই বাড়ছে। দেশীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে চায়ের ভোগ বাড়ে। তাছাড়া শীতকালীন মৌসুম, নির্বাচনকালীন পরিবেশ চায়ের ভোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। চা উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী না হলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এক্ষেত্রে চায়ের উৎপাদন বাড়ানো না গেলে দেশীয় চায়ের দামও বাড়তে পারে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো না গেলে, রপ্তানির জন্য তৈরি থাকতে হবে দেশের ভোগের চাহিদা মেটাতে।
ডিবিএন/ডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান