‘ছাগলকাণ্ডের’ ঘটনায় এবার দেশ ছেড়ে পালালেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। গতকাল রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা। এদিকে মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংক এর পরিচালক পদ থেকে অপসারণের জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই দিনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে।
তথ্যটি নিশ্চিত করে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, মতিউর রহমান আর কখনও সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় আসবেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকেও মতিউর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার স্থলে বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রোববার (২৩ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই দায়িত্ব দেয়া হয়।
২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তিন বছরের জন্য তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থের মালিক হওয়ার খবরে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে সরিয়ে দিলো সরকার। এছাড়া এনবিআরের সদস্য পদ থেকে তাকে ওসডি করা হয়েছে।
সব হারানোর পেছনে রয়েছে ‘ছাগলকাণ্ড’। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকার ‘ছাগল কেনা’ ইস্যুতে তোপের মুখে পড়েন মতিউর। ইফাতের ছাগল কেনার বিষয়টি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরই তা ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়।
শুধু তাই নয়, বেরিয়ে আসে এই কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবারের অঢেল সম্পদের চিত্র। মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাঁকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অল্প সময়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন। কারণ তাঁর চেহারা সবার পরিচিত। তবে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পরামর্শে তিনি মাথার চুল ফেলে টাক হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। মূলত সবার কাছ থেকে চেহারা আড়াল করতে এই কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি
এর আগে ধানমণ্ডি, কাকরাইল, গুলশানসহ মতিউরের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ঠিকানায় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর তাঁকে অফিস করতেও দেখা যায়নি।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম