প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী সংসদ ও প্রশাসন একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে। ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছি, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল। সরকার জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সাউথ এশিয়ান কনস্টিটিউশনাল কোর্টস ইন দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি: লেসন্স ফ্রম বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে উন্নত বিচার প্রশাসন বিনির্মাণে দুই দেশের মধ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মিথষ্ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে। আইনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমৃদ্ধ হবেন। ফলে দুই দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় আরোহণ করবে। বাংলাদেশ ও ভারত একই আইনের ও আইনি দর্শনের উত্তরাধিকারী হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তসমূহ আমাদের উচ্চ আদালত রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করার নজির আছে। এছাড়া কমন-ল কান্ট্রিজ হওয়ার সুবাদে যেকোনো দেশ যে কারো রায়কে প্রিসিডেন্স হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আমরা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। এর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আমরা আইন পাশ করে তাকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। বাজেটেও তাদের জন্য পৃথক বরাদ্দ দিয়েছি। আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেমন নিশ্চিত করেছি, তেমনি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনকেও স্বাধীন করে দিয়েছি। এতে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারবে। দুঃখজনকভাবে প্রায় ২১ বছর দেশের জনগণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে বন্দি ছিল।
তিনি বলেন, ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন ক্ষমতা জনগণের হাতে ছিল না। সুপ্রিম কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল সেটাই আমাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়। মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে একটা মামলা ছিল। মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ঐ মালিকানা দেওয়া হয়েছিল অন্য কাউকে। যেটা নিয়ে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মার্শাল ল’কে অবৈধ ঘোষণা করে, যা বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার সুযোগ এনে দেয়। এর মাধ্যমেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতায় প্রথমে রাজনীতিবিদদের গালিগালাজ করেছে। এরপর নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। প্রহসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রয়াস পেয়েছে। সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী এভাবেই তৈরি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত এবং একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত দেশের যে আর্থসামাজিক উন্নতি সম্ভব হয়েছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেই ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়তুর রহিম প্রমুখ।
আজ ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৫:৩২ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি