লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ছাত্রলীগ নেতা মিরাজুল ইসলাম মিরাজ কুপিয়ে হত্যা মামলায় ১২ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২২ মে) জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। খালাসপ্রাপ্তরা সবাই রায়পুর উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি ও শিবিরসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মী হন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, মিরাজ হত্যার ঘটনায় সাক্ষীরা আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। কোনো আসামিও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি। এছাড়া আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তবে বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নয়। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
আসামি পক্ষের আইনজীবী প্রেমধন মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় উদ্দেশমূলকভাবে ১২ বিএনপি ও শিবির নেতা-কর্কেমীদের হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৭ জন সাক্ষীরা কেউই অভিযোগ করেননি। তঁরা আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এতে আদালত তাদেরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।’
খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন, সদর উপজেলার বাসিন্দা-তানভির হায়দার রিয়াজ (সে বর্তমানে প্রবাসে পলাতক),, সাবেক যুবদল নেতা নুরে হেলাল মামুন, সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা জহির সর্দার, কেরোয়া ইউপি সদস্য হোসেন মিয়ার ছেলে মাদক ব্যাবসায়ী রাকিব হোসেন রাজু, ডাইল হারুন, মোঃ মুসলিম ,মাসুদ আলম, সোহেল, জাহাঙ্গির, মোঃ রিয়াজ,, বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল, শিবির নেতা রফিক উল্লাহ সোহাগ প্রমুখ।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
আদালত সূত্রে জানাযায়, আসামিদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা মিরাজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠে। মিরাজের কাছে তাদের (আসামিদের) ব্যবসার ৩ লাখ টাকা ছিল। ওই টাকা বন্টন নিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। পরে হত্যা ঘটনার ২-৩ দিন আগে আসামিরা মামলার বাদী মিরাজের বাবা আবুল কালামের মাছের দোকানে গিয়ে হামলা করে। এসময় তারা মিরাজকে খোঁজ করে হুমকি দিয়ে চলে যায়। তখন তারা কালামকে স্থানীয় খাবার হোটেলে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। তিনদিনের মাথায় ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জহিরের বাড়িতে মিরাজকে ডেকে নিয়ে ব্যবসায়িক কথাবার্তা বলে। পরে কৌশলে মাসুদ ও সোহেলকে পরামর্শে তাকে মোটরসাইকেলযোগে ভূঁইয়ারহাটের দিকে নিয়ে যায়। মাসুদ ও সোহেল তার সঙ্গী হয়। পরে মিরাজের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য মাসুদ ও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য আসামিরা। রায়পুরের ভূঁইয়ার হাট থেকে ফেরার পথে বিকেলে কেরোয়া ইউনিয়নের ভাঁটের মসজিদের অদূরে নির্জন এলাকায় পৌঁছলে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনাস্থলে প্রচুর রক্তক্ষরণে মিরাজ মারা যান। তার মাথা, কপাল, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপানোর চিহ্ন ছিল। মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ ও সোহেলকেও আঘাত করা হয়। পরে ডাক্তারি প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসুদ ও সোহলের আঘাত সামান্য ছিল।হত্যাকাণ্ডের পরদিন জামায়াত নেতা হাফেজ ইউছুফ ও শিবির নেতা পরানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
পরবর্তীতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দিতে বাদী ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এসময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহার দেন। এতে জেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করেছিলেন।
নিহত মিরাজের বাবা মাছ ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, আসামিদের ফাঁসি হলে মিরাজের আত্মা শান্তি পেত। আসামি রাজু, রিয়াজ ও জহির সর্দার পরিকল্পিতভাবে অন্যদেরকে নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমাকে তারা আদালতে যেতে নিষেধ করছিলো। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়েছিলো। এতে আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও ছিলাম। আমি আদালতের রায়ে অসুন্তষ্ট হয়েছি। আমি উচ্চ আদালতে যাবো।
দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণে আদালতে অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হয়নি। এতে আদালত তাদের খালাস দেন।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি