মায়ের দেহ থেকে সন্তানের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি বা সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রবাহের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গবেষণাটি প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে যে, নবজাতক সন্তান মায়ের কাছ থেকে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায়। এই গবেষণা প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি থেকে অন্যজনে সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রবাহের নতুন তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৭১ শতাংশ। এছাড়াও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গর্ভবর্তী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই জটিলতা আরও খারাপ হয়।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নিপাহ ভাইরাসে ফরিদপুর জেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সী একটি মেয়ে এবং তার মা সংক্রমিত হয়। তাদের উভয়েই খেজুরের কাঁচা রস পান করেছিল। দুঃখজনকভাবে, শিশুটি মারা যায় এবং মা গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার শিকার হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি আবার গর্ভধারণ করেন এবং তিনি প্রসবের পূর্বে জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্স কর্তৃপক্ষের নিবিড় তত্ত্বাবধানে সেবা পেয়েছেন।
এরপর ২০১১ সালের আগস্টে তিনি একটি সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দেন। রুটিন সারভাইভার ফলোআপের অংশ হিসেবে নবজাতকের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ভাটিকেল ট্রান্সমিশন বা মা থেকে থেকে শিশুতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাদ দেওয়ার জন্য রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। যদিও পরীক্ষা করে রেপিড ও পিসিআর টেস্টে নিপাহ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু অ্যান্টি-নিপাহ আইজিজি-র একটি উচ্চ টাইটার দেখতে পাওয়া যায়। এভাবেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মা থেকে সন্তানের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল এন্টিবডি পৌঁছে।
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্সের প্রশংসা করে বলেন, আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সনাক্তকরণ, রোগের সংক্রমণের ধরন এবং মারাত্মক সংক্রমণের বিরুদ্ধে থেরাপিউটিকস এবং ভ্যাকসিন তৈরিতে নতুন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহে বিশ্বের দীর্ঘতম নিপাহ ভাইরাস সার্ভেইল্যান্স পরিচালনা করছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি সফল প্রচেষ্টা এবং আমি আশা করি আমরা শিগগিরই নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা বের করতে পারব যা অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে।
প্রসঙ্গত, নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস (অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়) এবং এটি দূষিত খাদ্য অথবা সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। টেরোপাস জেনাসের ফলখেকো বাদুড় এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক ধারক এবং মহামারি সৃষ্টিতে সক্ষম রোগের মধ্যে এটি একটি। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং তখন থেকে এই জনবহুল দেশে প্রায় প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যায়। আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত, মোট ৩৩১ জন মানুষ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৩৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
ডিবিএন/ডিআর/মাহমুদা ইয়াসমিন