আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী ১৮০ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। অনুসন্ধান শেষ করে গত দুই মাসে দুদক মামলা করতে পেরেছে মাত্র একটি।
গত ৯ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে দুদক। এ মামলায় আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রী এবং দুই ছেলে-মেয়েকেও আসামি করা হয়েছে। তার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেনও এ মামলার আসামি।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও অন্য প্রভাবশালীদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচনী হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সম্পদ কত গুণ বেড়েছে, সেই তথ্য বের করে রেখেছেন অনুসন্ধানে যুক্ত থাকা দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুদক আইন অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন বা অর্থ পাচারের অভিযোগ এলে আগে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে হয়। অনুসন্ধানে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা করা হয়।
এরপর দুদক নিয়োজিত একজন তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
দুদক বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে, তাদের কার কত সম্পদ, সেটা জানতে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়গুলোতে চিঠি পাঠিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পাসপোর্ট অধিদফতর ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
অনুসন্ধানে দীর্ঘসূত্রতার ক্ষেত্রে উপ-পরিচালকদের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, অনুসন্ধানের প্রয়োজনে যা যা করণীয়, তা করার এখতিয়ার অনুসন্ধান কর্মকর্তার রয়েছে। তবে স্পর্শকাতর কিছু হলে কমিশনকে অবহিত করতে হয়।
তিনি বলেন, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধান শেষ হলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে এখন যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে- হাছান মাহমুদ, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু, দীপু মনি, আ হ ম মুস্তফা কামাল, শাজাহান খান, টিপু মুনশি, তাজুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, আমির হোসেন আমু, ইমরান আহমেদ, জাহিদ মালেক, গোলাম দস্তগীর গাজী, কামরুল ইসলাম, আবদুর রহমান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নুরুজ্জামান আহমেদ, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরিদুল হক খান, নসরুল হামিদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মেহের আফরোজ (চুমকি), এনামুর রহমান, জুনাইদ আহ্মেদ (পলক), জাকির হোসেন, কামাল আহমেদ মজুমদার, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জাহিদ আহসান (রাসেল), স্বপন ভট্টাচার্য্য ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
সাবেক বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- শেখ হেলাল উদ্দীন, নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, কাজী নাবিল আহমেদ, ইকবালুর রহিম, সাইফুজ্জামান শিখর, আবু সাঈদ আল মাহমুদ (স্বপন), সোলায়মান হক জোয়ার্দার, এনামুল হক, বেনজীর আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, শাহে আলম, মনসুর আহমেদ, নাঈমুর রহমান (দুর্জয়) প্রমুখ।
এর বাইরে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাবেক সচিব শাহ কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম