বরগুনার আমতলীতে রবিবার মাইক্রোবাসে কনে পক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়ীতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে হলদিয়া হাট ব্রীজের উঠামাত্রই ব্রীজ মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে মাইক্রোবাসটি নদীতে পড়ে যায়। ৪ জন সাতরে কিনারে উঠতে পারে। পরে স্থানীয়, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন ও নাশির উদ্দিন বলেন, মাইক্রোবাস ও অটোগাড়ীটি ব্রীজের মাঝখানের আসা মাত্রই ধপাস করে ব্রীজ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। তাৎক্ষনিক আমরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
একই পরিবারের তিন নিহতের স্বজন আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার কিছুই রইলো না। আমার দুই কন্যা ও স্ত্রী মারা গেছে। সব হারিয়ে আমি এখন অসহায়।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, ব্রীজ নির্মাণ কালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা ব্রীজ নির্মাণ করেছে। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই ব্রীজের মাখঝানের ভীম ভেঙ্গে গেছে। ওই ভাঙ্গা ব্রীজ দিয়ে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করতো। তিনি আরো বলেন, এই ভাঙ্গা ব্রীজ মেরামতের জন্য আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বহুবার জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমলে নেয়নি। যার ফলে রবিবার ৯ জনের প্রাণ গেল। ঠিকাদার দায়সারা ব্রীজ নির্মাণ করায় এবং উপজেলা প্রকৌশলী ব্রীজ সংস্কার না করায় তাদের শাস্তি দাবী করছি।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ব্রীজ ভেঙ্গে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে নিয়ে বিয়ের কনে পক্ষের ৯ জন মানুষ মারা গেছে। নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, আমি যথাযথ ভাবেই ব্রীজ নির্মাণ করেছি। ব্রীজ নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম করিনি।
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার ইনচার্জ মোঃ হানিফ বলেন, চার ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে মাইক্রোবাস উদ্ধার করতে পারিনি। উদ্ধার চেষ্টা অব্যহত আছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ব্রীজ ভেঙ্গে নিহত ৯ জনই হাসপাতালে আনার পুর্বেই মারা গেছেন।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমতলীতে আমার যোগদানের পুর্বে এ ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানিনা।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। উদ্ধার কাজের তদারকি করছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। এ ব্রীজ নির্মাণ যে ঠিকাদার অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ঘটনাস্থলে বিক্ষুদ্ধ মানুষকে শান্ত করেছি। তিনি আরো বলেন, ব্রীজ নির্মাণে অনিয়মের কারনে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।
আজ ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৩:৩২ | মঙ্গলবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান (বাপ্পি)