পর্যটন কেন্দ্র ব্যস্ততম শহর মৌলভীবাজারের অন্যতম প্রাণ শহীদদের শ্রদ্ধার স্থান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ফুরসত করে কাজের ফাঁকে অবসরে কুশল বিনিময়ে সময় কাটাতে ব্যস্ত শহরের বুকে সাধারণ মানুষজনদের পছন্দের একটি জায়গা শহীদ মিনার।
তবে শহরবাসীর স্বস্তির জায়গায় এখন আর স্বাচ্ছন্দে পরিবার কিংবা পছন্দের কোনো মানুষের সাথে গল্প করা বা ঘুরে বেড়ানোর পরিস্থিতি এখন আর নেই।
উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীর উচ্ছৃঙ্খল বিচরণে ও গোপন আস্তানায় পরিনত করে তুলেছে এনিয়ে অতিষ্ঠ শহরবাসী। বলা হয়ে থাকে মৌলভীবাজারের অনত্যম প্রাণকেন্দ্র শহরের বুকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবস্থিত এই শহীদ মিনার। কিশোর-কিশোরি থেকে বৃদ্ধ সকলেরই ব্যস্ততার মাঝে একটু স্বস্তির সময় কাটানোর ও কাছের মানুষের সঙ্গে গল্প করতে শহীদ মিনার পছন্দের একটি জায়গায়র মধ্যে অন্যতম।
সকলের প্রিয় এই শহীদ মিনার যেন এখন স্কুল-কলেজের কিছু শিক্ষার্থীদের আড্ডাখানা। পুরো শহীদ মিনারজুড়েই তাদের আনাগোনা এবং প্রকাশ্যেই চলে ধূমপান। এছাড়াও কিছু উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী প্রকাশ্যে করছে অবাধ মেলামেশা। এসবের সবই হচ্ছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। এদের এমন দৃশ্যে আগতদের বিব্রত হলেও অজানা কারণে কেউ এসবের প্রতিবাদ করছে না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাই স্কুল এন্ড কলেজ , মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শহীদ মিনারে এসে সময় কাটাচ্ছে। এসময় তাদের একে অন্যের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ট সময় কাটাতেও দেখা গেছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের সম্মানে নির্মিত শহিদ মিনারটিতে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে জুতা পায়ে দিয়ে উঠছে, অনেককে আবার দেখা যায় বেশ স্বস্তির সঙ্গে বসে শহিদ মিনারের উপর জুতো পায়ে দিয়ে ধুমপান করছে। এদের এসব কর্মকান্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে নানান ভোগান্তিতে।
শহরের অধিকাংশেই নেই এরকম খোলা মাঠ তাই বিকেলবেলা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খেলতে আসেন অনেকেই। তবে কিছু উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের প্রকাশ্যে এরকম অবাধ মেলামেশার কারণে অনেকের পরিবার থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞাও করা হয়েছে এ জায়গায় না আসার জন্য বাধ্য করছে।
তাদের এসব কর্মকাণ্ডে নজর নেই যেমন অভিভাবকদের, একইভাবে শিক্ষক এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দ্বায়িত্ব শীলদের তদারকির অভাবে অগোছালো পরিবেশের সৃষ্টি বলে মনে করছে সচেতনমহল।
এ বিষয় শহিদ মিনারে আসা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনেক সময় স্কুল ছুটির পর এখানে আসি, বসে আমাদের বন্ধু-বান্ধব মিলে অবসর সময় কাটাই। এমন সময় আমরা এসে দেখি আমাদের বড় ভাইয়েরা কিছু মেয়েদেরকে নিয়ে বসে আড্ডা দেন। এটা আড্ডা দেওয়ার জায়গা নয়, এটি শহীদ মিনার যেহেতু আমরা বসতে আসি তখন তাঁরা আমাদের তাড়িয়ে দেন। বলেন এখানে আসতে পারবে না। দেখছো আমরা এখানে বসা এমন মন্তব্য করে আমাদের তাড়িয়ে দেন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের ঠিকমতো অধিকারটুকু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কিন্তু এটা নিয়ম নয়, আমাদের অভিযোগ করার মতো জায়গা নেই, কাকে জানাবো এমন প্রশ্ন রাখেন ওই শিক্ষার্থী!
তিনি আরও বলেন, বড় ভাইয়েরা যদি এমন কর্মকাণ্ড করেন তাহলে তাদের দেখে আমরা কি শিখবো! এমন কর্মকাণ্ডে একদিন আমাদের সমবয়সীরাও তো জড়াতে পারে।
প্রশাসনের প্রতি আমাদের একটাই দাবি এ সকল অসামাজিক কার্যকলাপ দ্রুত বন্ধ করা হোক। এখানে বিকেলে খেলাধুলা হয়। আর শহীদ মিনারটি আমাদের সংস্কৃতির আশেপাশে যেনো এরকম খারাপ দৃশ্য না দেখতে হয়।
একই কথা বলেন আরেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, তাদের জন্য আমরা এখানে এসে বসতে পারিনা, তাদের থেকে দূরে সরে বসলেও আমাদের বলেন এখান থেকে চলে যাও। অনেক সময় তাঁরা পায়ে জুতা নিয়ে শহীদ মিনারের বেদিতে উঠেন এটা ঠিক নয়। আমরা চাই এটি বন্ধ হোক।
এ বিষয় পৌর মেয়র মো: ফজলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় জেলা প্রশাসক পদক্ষেপ নিবেন। আর পৌর মেয়র হিসেবে আমি প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষজন এবং শিক্ষার্থীদের শহিদ মিনারে জুতো পায়ে দিয়ে না উঠার আহ্বান করেছি। এবং ইতিমধ্যে শহীদ মিনারের ভারসাম্য রক্ষায় মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে নানান ধরনের অভিযান করেছি, যে বা যারা শহীদ মিনারের সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিব।
আজ ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:৪৭ | শনিবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি