বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘হুমকির প্রচারণা’ করছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির মর্যাদা এবং নাগরিকত্ব থাকায় আমি সিঙ্গাপুরে সুরক্ষা পাবো। খবর- দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এস আলম গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচারের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর।
সম্প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। এস আলম গ্রুপের সদস্যরা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান এবং আমদানি ভাউচারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।
এদিকে ঐ সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে এস আলম পরিবারের পক্ষে এই চিঠি দিয়েছে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, গভর্নর আহসান মনসুর এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনসমক্ষে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তার পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে। বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
এস আলম গোষ্ঠীর এই চিঠি ও আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার হুমকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাঘাত। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন সাইফুল আলম নেননি। দেশের যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগ করেছে, সেই তালিকায় সাইফুল আলমের নাম নেই।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের আইনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি সেই দেশে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। এটা করতে পারলে তাদের ছেলে সন্তানেরা সে দেশে সরকারি চাকরির সুযোগও পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক নিতে হলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।
সুত্রঃ দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৭:১১ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি
