লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ষড়যন্ত্রমূলক অপ-প্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দক্ষিণ ঘনেশ্যাম স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর ) দুপুর ১ টার দিকে তার নিজ বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন।
মহান ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪ এর ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন ঘটানো ছাত্র-জনতায় আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, গত ২২ অক্টোবর আমার প্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা যা আমার ৩৩ বছরের চাকুরি জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সবচেয়ে বড় দুঃখজনক ঘটনা। একদল স্বার্থলোভী মহল এবং কিছু সংখ্যক শিক্ষক তাদের নিজ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কিছু সাধারন শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, আমার প্রতি তাদের উগ্র আচরণ আমাকে ব্যথিত করেছে। ওই দিন আমি আমার প্রতিষ্ঠানে যাই এবং প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে আমার কার্যালয়ে ডাকি, তার সাথে কথাবার্তা চলাকালে হঠাৎ আমার প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক অধর চন্দ্র রায় কক্ষে প্রবেশ করে এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় অপমান ও গালিগালাজ শুরু করে আমি এর প্রতিবাদ করলে আমার গায়ে হাত তুলে রুম থেকে বেড়িয়ে যান । এই সময় প্রতিষ্ঠানে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা ও অন্যান্য ক্লাস চলমান ছিল।
অধর চন্দ্র ওই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ডেকে আমার বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয় এবং আমার উপর চড়াও হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি সে (অধর) বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী খালেক, বারেক, আনোয়ার, রাজুকে নির্দেশ দেয় আমাকে আক্রমন করতে এবং আমাকে চেয়ার থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হয়। আমার কাছে থেকে প্রয়োজনীয় নথীপত্র সহ আমার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আমি সাহায্যোর জন্য চিৎকার করলে প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মোখলেসুর রহমান ও ল্যাব এ্যসিস্টেন্ট আশরাফুল ইসলাম আমাকে সাহায্য করতে আসেন।
ইতোমধ্যে উক্ত বহিরাগত লোকদের বিভ্রান্তমূলক কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের নেতৃত্বে আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমার কার্যালয়ের দিকে তেড়ে আসে পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করে প্রতিষ্ঠানের একজন নারী কর্মচারীকে মারধর ও লাঞ্চিত করে ও আমাকে সাহায্য করতে আসা মোখলেসুর রহমান ও আশরাফুল ইসলাম কেও বেধরক মারা শুরু করে। এই অবস্থা দেখে আমাদের চিৎকার শুনে আশেপাশের কয়েকজন আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু আক্রমনকারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়।
এমতাবস্থায় আমি সেনাবাহিনীর সাহায্যের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করি এবং ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করি।
ইতোমধ্যে শিক্ষক অধর এর নির্দেশে আমাকে আমার কক্ষে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সেই স্বার্থলোভী লোকদের দারা প্রভাবিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করে এবং নিজেরাই নিজে নিজে নানান ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় ও অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মনে বলতে হচ্ছে সন্তানতুল্য ছাত্র ছাত্রীরা এতটাই প্রভাবিত হয় যে তারা আমাকেও আক্রমন করতে দ্বিধাবোধ করে না। পাশাপাশি আমাকে যারা সাহায্য করতে এসেছিল তাদেরকেও মারধর করে আহত করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষের দরজা, জানালা, কয়েকটি আলমারী, অণুবীক্ষণ যন্ত্র, সাইন্সল্যাবের কংকাল, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ভাংচুর করে ও প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও শিক্ষার্থীদের মূল সনদ চুরি করে সেই স্বার্থানেষী মহল ও এলাকার চিন্তিত সন্ত্রাসীরা। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে, আনুমানিক দুপুর দেড় ঘটিকার দিকে প্রথমে পুলিশ এরপর সেনাবাহিনী সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ আমার ছিনতাইকৃত ব্যাগ উদ্ধার করে আমাকে ফেরত দেয়। সেনাবাহিনী দুষ্কৃতিকারীদের সাবধান করে দেয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয় ছাত্রছাত্রীদের শান্ত করেন ও আমাকে উদ্ধার করে তাদের সাথে ইউএন এর কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানেই আমি আমার প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করি। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন আহত কর্মচারী বৃন্দ ও আমাকে সাহায্য করতে আসা ব্যক্তিবর্গকে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এবং সেখানে তাড়া চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে একজনকে ডাক্তার সিটি স্কান করতে বলেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। আমার কিছু ছাত্র ভাংচুর করতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে আমি তাদের খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা আল্লাহর রহমতে কেউ গুরুতর নয় এবং সবাই উপযুক্ত চিকিৎসা পেয়েছে। উল্লেখিত ঘটনাকে মিথ্যাভাবে প্রচার করার উদ্দেশ্যে সেই স্বার্থান্বেষী লোকেরা নানান কাহিনী সাজাচ্ছে শিক্ষার্থীদের ব্যাবহার করে এবং আমাকে নানাভাবে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এরই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি স্যারের পরামর্শে আমি আইনি প্রক্রিয়া নিতে তৎপর হই । কিন্তু সেই দুষ্কৃতিকারীরা আইনের অবমাননা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং অধর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে ও এলাকার লোকজনদেরকেও উস্কানি দিচ্ছে ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকী দিচ্ছে ও নানাভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তারা যখন আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের অপকর্ম প্রকাশ হওয়ার সম্ভবনা দেখছে তখন তারা আন্দোলন, অবরোধ এইসব পথ অবলম্বন করছে। আর এইসব এর হাতিয়ার বানাচ্ছে আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে। তাদের জীবনের পড়াশুনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে । তারাই সকল অপকর্ম করে এখন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নানা অন্যায্য দাবি করে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করাচ্ছে।
৫ আগষ্টের পর আমার প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সভাপতি বদিউজ্জামান উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক পলাতক অবস্থায় সে নানা ভাবে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে ও এলাকায় আমাকে বদনাম করার চেষ্ঠা চালাতে থাকে। এলাকার কিছু দুষ্কৃতিকারীদের সাহায্যে নানা ভাবে আমাকে উক্ত ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রাকিবুল ইসলাম পলাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রধান শিক্ষক, আপনারা খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন তিনি দূর্নীতি করেছেন কি না, আমি এলাকাবাসীসহ প্রতিবাদ করেছি মাত্র।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:২১ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি