নেত্রকোণায় ২০২১ সালে ইউটিউব দেখে ২০২২ সালে বাড়ি পাশে পরিত্যক্ত জমিতে অল্প পরিসরে আদা চাষ করেন নাসিমা আক্তার। বাবা ভ্যান চালক হওয়ায় অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রথমে সংসার ভাল চললেও হঠাৎ স্বামীর সাথে বিরোধ শুরু হয়। সেই বিরোধ থেকে নাসিমা আক্তারের স্বামীর পরিবার থেকে তার বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয়। পরে ২৫ বছর বয়সে স্বামী পরিত্যক্তা হন তিনি। তার বাবা অল্প আয় করে নিজের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তার বাবার সেই কষ্ট দেখে নাসিমা আক্তার চাকরি করার জন্য ঢাকায় চলে যায়। কিছুদিন চাকরি করার পর আবার বাড়িতে আসে, বাড়িতে আসার পর সে বস্তায় ও বস্তাছাড়া দুইভাবে আদা চাষ শুরু করেন।
এরপর নাসিমা আক্তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে বাবার বাড়িতে থেকে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখার চেষ্টা করছেন। ইউটিউবের অভিজ্ঞতা থেকে বাড়ি পাশে অল্প পরিসরে আদা চাষ শুরু করেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ২০২৩ সালে নেত্রকোণা সদর উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে বড় পরিসরে আদা চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। কিছুদিন পর উপজেলা অফিস থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নাসিমা আক্তারকে ৩৩ শতাংশ জমির সমপরিমাণ আদা ও সার দেন উপজেলা অফিস। পরে তিনি সার ও মাটি মিশিয়ে বস্তায় ভরে আদার রোপন করেন।
অল্প খরচে স্বল্প সময়ে আদা চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
নেত্রকোণা সদর উপজেলার লক্ষিগঞ্জ ইউনিয়নের তিয়স্ত্রী গ্রামের লালু মিয়ার মেয়ে নাছিমা আক্তার নামের স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী। বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় এখন ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে ৩৩ শতাংশ জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এই নারী। অল্প পরিশ্রমে গাছের ছায়ায় পরিত্যক্ত ৩৩ শতাংশ জমিতে ৩ হাজার ৫০০ প্যাকেট আদা চাষ করেন। আদা চাষ করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নাসিমার এই সহজ পদ্ধতিতে আদা চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্য কৃষকরা। আবার অনেকেই বাড়ির পাশে পরিত্যাক্ত জমিতে অল্প পরিসরে চাষ শুরু করেছেন।
একই এলাকার রুবেল মিয়া তার আদা চাষ থেকে বাড়ির পাশে কিছু বস্তায় আদা লাগান এ বছর ভাল ফলন পেলে আগামিতে আরো বেশি করে লাগাবেন। এছাড়াও এলাকার কৃষকসহ সাধারন মানুষ অনেকেই তাদের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমিতে গাছের ছায়ায় জঙ্গলে বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি বস্তায় আদা লাগিয়েছেন ভাল ফলন পেলে তারাও বেশি করে চাষ করবেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিনা রহমান নিসা বলেন বর্তমানে তার জমির গাছগুলো মোটামুটি ভাল হয়েছে। আমরা আশা করছি ভাল ফলন হবে এবং তিনি ভাল লাভবান হবেন। আগামীবছর আরো বেশী পরিমান আদা চাষ করবেন।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নেত্রকোণা সদর নেত্রকোণা, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন নতুন এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করে কম খরছে অল্প সময়ে লাভবান হবেন কৃষকরা। আরার অনেকেই নাসিমার আদা চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব সময় আগ্রহী কৃষকদের সহযোগিতা করব। বস্তায় আদা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনী অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন এলাকার কৃষকরা।
এ বিষয়ে উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নেত্রকোণা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বসতবাড়ি আশেপাশে পতিত জমি গুলোতে কৃষক ভাইদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বসত বাড়ির আশেপাশে যে খালি জায়গাগুলো আছে সেখানে বস্তায় আদা চাষ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেছি। বর্তমানে জেলায় এ বছর প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি