ডেস্ক রিপোর্ট : ক্যাসিনো বিরোধী দেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠা জুয়ার আসর গুলো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে, একশ্রেণীর অসাধু রাজনৈতিক দলের পরিচয়ধারী চাঁদাবাজ চক্র ও কিশোর গ্যাং প্রতিদিন মোটা অংকের চাঁদাবাজী বিনিময়ে, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে আলমগীরের জোয়ার আসর। পরিচয় দেই আওয়ামী লীগের কর্মী।
শুধু জুয়াতে শেষ নয়, এসব আসর গুলোতে মিলে ইয়াবাও। মাদক সেবনের সুযোগ রাখা হয় জুয়াড়িদের জন্য। র্যাবের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে, তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন। কিন্তু অসহায় সবাই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হালিশহর থানাধীন ২৭ নং ওয়ার্ড, ছোটপোল এলাকায়, বুল্লার কলোনির ভিতরে চলছে, আলমগীরের জোয়ার বোর্ড। আলমগীরের সহযোগী ও জোয়ার বোর্ডের ম্যানেজার তাজু। সকল লেনদেন করে তাজু। দৈনিক প্রায় ১০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয় জুয়ার আড্ডায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবৈধ জুয়া খেলায় লাখ লাখ টাকার লেনদেন চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করা অভিযোগে উল্ল্যেখ আছে, আলমগীরের জোয়ার বোর্ডের কারণে ছাত্র, ব্যবসায়ী, দিন মজুরসহ নানান পেশার মানুষ সর্বশান্ত। প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ থাকার পরেও জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনা। প্রতিদিন রাতে জয়া ও মদের আসর বসিয়ে, সাধারণ মানুষ সহ অনেক দরিদ্র মানুষের পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগে উল্ল্যেখ আছে, হালিশহর থানা উক্ত জয়া ও ইয়াবা ব্যবসায়ী আলমগীর (মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ও আওয়ামী লীগ সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক ব্যবসায়ী) এর সাথে সম্পেক্ত থাকায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
আরো উল্ল্যেখ আছে, বর্তমানে জুয়া, মদ ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে স্থানীয় থানার কতিপয় পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশ ও পুলিশের সাথে গোপন আঁতাত থাকার কারণে, জুয়া, মদ ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেহ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা। পুলিশ কমিশনার ও র্যাব-৭ অভিযোগ করলে, তাহারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, আইনে জুয়ার যে ধারা রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। ফলে দিনে দিনে জামিনে বেরিয়ে যায় আটককতরা। যার ফলে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্তরা এই জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। সমাজে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই ও পারিবারিক অশান্তির মতো নানান ঘটনা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, আসরটি পরিচালনা করতে দৈনিক ৩০ থেক ৪০ হাজার টাকাও বেশি খরচ করতে হয়। এই সব টাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স ও ক্যাশিয়ারের প্রতিদিন নিয়ে যায়। মাঝে মাঝে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযানে হলেও, আগাম তথ্য পেয়ে সরে যায় জুয়াড়িরা। কয়েকঘন্টা বন্ধ রেখে ফের চালু হয়। তবে মাঝে মধ্যে ছোট খাটো স্পট গুলোতে অভিযান করেছে পুলিশ। যা কেবল লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের পরিচালনায় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা থাকায় প্রতিবাদ করতে তারা সাহস পাচ্ছেন না। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি জেনেও রয়েছে নিরব, নিচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। জুয়ার আসর ঘিরে প্রায় সময় মারামারি হওয়ায় এলাকায় বসবাসরত মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন।
এদিকে হালিশহরের জুয়ার আসরে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা একজন জানান, জুয়ার প্রত্যেক বোর্ড শেষে প্রতি টেবিল থেকে আদায় করা হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। এই টাকা নেতা ও পুলিশের কাছে যায়।
তিনি আরো জানান, এই জুয়া বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ‘হাজারী’ খেলা, ‘তাস’ খেলার টেবিলে হয় সবচেয়ে বেশি ভিড়। ‘কাইট’ খেলা ও ‘নাইন কাটে’র মাধ্যমে চলে বড় অংকের টাকার জুয়া খেলা।
এলাকাবাসীরা বলেন, ‘পাড়ার ভেতরে এসব অসামাজিক কার্যকলাপ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এসব অসামাজিক কার্যকলাপের ফলে ভেঙে পড়ছে সামাজিক বন্ধন। দিন দিন অসামাজিক কার্যকলাপ, কিশোর গ্যাং, ইপ্টেজিং, মাদকের দিকে যাচ্ছে উঠতি বয়সী তরুণ-যুবকরা।’
বর্তমান সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ এছাড়া ‘পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭’ এর ৩, ৪ ও ১৩ ধারা অনুসারে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।