রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে এসএসসি ২০২৪ সালের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বর্ষায় ভাঙ্গন-প্লাবন আর শুষ্ক মৌসুমে প্রখর রোদ আর ধূলোবালির সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করা কৃতি শিক্ষার্থীদের সোমবার (২৪ জুন) উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের আনুর বাজার এলাকায় ব্যারিস্টার মঞ্জুম আলীর নিজস্ব উদ্যোগে রংপুর-১ আসনের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করনের লক্ষ্যে ক্রেস্ট ও নগত ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এতে তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মেধা কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উৎসবে রূপ নেয়। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট নিবন্ধন অনুযায়ী মঞ্চের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে একে একে ক্রেস্ট ও নগত ৫ হাজার টাকা উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করে। এ সময় সবার মুখে ছিল হাসির ঝিলিক। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কেউ মুহূর্তটি ধরে রাখে সেলফিতে। পরে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ আসনে এসে বসে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আহ্বান জানান, যারা যারা ইসলামিক সংগীত, কবিতা আবৃত্তি বা গান করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন অংশ নেয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ব্যারিস্টার মঞ্জুম আলী। তিনি বক্তব্যে বলেন, ’আমি আয়োজন করতেছি মানুষের ভালোবাসার প্রতি ; দেখতেছি গঙ্গাচড়ার মানুষ বরাবরই অবহেলিত। আমি চাই গঙ্গাচড়ার মানুষ এগিয়ে যাক তাদের উৎসাহ দিতেই আমার এ আয়োজন। তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে মেধা কাজে লাগিয়ে ভালো কাজের সঙ্গে থাকবে তারা দেশের জন্য নিজের মেধা কাজে লাগাবে। এভাবেই ভালো রেজাল্ট করবে আমি সম্মাননা ক্রেসসহ তাদের উদ্বুদ্ধকরণ করবো। আমি গঙ্গাচড়াবাসীর সবসময় পাশে আছি। আমার কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
কথা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা তিস্তার চরাঞ্চলের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তখন তার মতো অনেকেই অনুষ্ঠানস্থলের গেটে হাজির। তার ভাষ্য, তার জীবন আর ১/২ জনের মত নয়, চরের ভাঙ্গন, রোদ আর ধূলোবালির সঙ্গে লড়াই করা জীবন।
সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বেশ কিছুটা পথ হেঁটে, তারপর অটোরিকশায় করে অনুষ্ঠানে এসেছে সে। এখানে এসে এত এত মেধাবী মুখ একসঙ্গে দেখে খুব ভালো লেগেছে তার। এমন অনুষ্ঠান তাকে মুগ্ধ করেছে। অনুষ্ঠানস্থলে এসে উচ্ছ্বাসে মেতেছে সকল শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানস্থলে খারারের প্যাকেট, ক্রেস আর একটি খামে করে ৫ হাজার টাকা হাতে বসে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া মুনতাহা। বাবা সঙ্গে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছে সে। সে বলে, ‘আমি মঞ্জুম স্যারের ছোট ভাইয়ের ফেসবুকে দেখে যোগাযোগ করে নিবন্ধন করেছি। এ রকম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। আমি খুবই আনন্দিত।
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এবার ভালো রেজাল্ট করছে ঠিক ই তবে আমরা গরিব মানুষ কলেজে ভর্তি করাইতে ম্যালা টাকা নাগবে চিন্তাত ছিনো। এখন আমার এত ভালো লাগতিছে যে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়, এই যে ৫ হাজার টাকা পাবো আমার মেয়েকে ভর্তি করাবো আমার কাছে এটাই অনেক বড়ো। কিভাবে আয়োজকে ধন্যবাদ জানাব আমার জানা নেই। অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা জানাই।
উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্ণালী জামানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মোকাররম হোসেন সুজন। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘যে মানুষটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তাকে স্বাগত জানাই। দেশের বাহির অক্লান্ত পরিশ্রম করে অর্থ ইনকাম করে আমাদের এখানকার মানুষের জন্য উজার করে দিচ্ছেন। অনেকের কাছে ৫ হাজার কম মনে হলেও এটা গড় হিসাব করলে অনেক পরিমান টাকা দ্বারা। কে আছে রংপুর-১ আসনে এতো গুলো টাকা শিক্ষার জন্য অনার করে দিবে। আমি চাই তোমরা সামনের দিকে মানুষ গড়ার কারিগর হও। আমি বলব সুশিক্ষায়ই জাতির মেরুদণ্ড, তোমরা মানুষ হও। আমি চাই এমন অনুষ্ঠান অভ্যাহৃত থাকুক।’
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মুকুল, বক্তব্য রাখেন লক্ষীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী, গঙ্গাচড়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুলা আখের মিয়া, বীর সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, গঙ্গাচড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমাম আবু ইমামসহ প্রমুখ। এ সময় আরো স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজ ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শরৎকাল | ২৬শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৬:১৩ | রবিবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান (বাপ্পি)