ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় আটক সিয়াম হোসেনকে নিয়ে খালে তল্লাশি চালিয়ে হাড়গোড় উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। পরিচয় শনাক্তের জন্য সেগুলো পরীক্ষা করা হবে। অভিযানের শুরুতেই সেখানে সিয়ামের দেখিয়ে দেওয়া স্থানে পাওয়া গেছে একাধিক হাড়গোড়।
রোববার সকাল আটটার থেকে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। এর আগে ১৬ দিনের বেশি তল্লাশি চালিয়েও কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। এ দিন অভিযান শুরুর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই উদ্ধার হয় হাড়গোড়।
সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক হাড়। এগুলো এমপি আনোয়ারুল আজীমের মরদেহের অংশ বলে সিয়ামের দাবি। তবে এই হত্যার ঘটনায় এর আগে আটক ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার জিজ্ঞাসাবাদে ভিন্ন জায়গায় এমপির মরদেহ ফেলার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু সিয়ামের দেখানো জায়গাতেই আজ তল্লাশি চালিয়ে হাড়গুলো উদ্ধার করা হয়। এগুলো বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীমের শরীরের হাড় কি না, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এমপি ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে রওনা হন। ১১ মে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে বন্ধ পান।
গত ১৩ মে আনোয়ারুলের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ম্যাসেজ আসে। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’
পরে আরও কয়েকটি ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে। আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হয়েছেন বলে বাদী জানতে পেরেছেন। তবে এখনো লাশ পায়নি পরিবার।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন তাঁর কলকাতার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তাঁর মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা করেন।
পশ্চিবঙ্গ পুলিশ বলছে, গত ১৩ মে সঞ্জীবা গার্ডেনে এমপি আনারকে খুন করা হয়। তাকে খুন ও লাশ গোপন করার কাজে যুক্ত ছিলেন এই সিয়াম। নিউ টাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীবা গার্ডেনের সিসিটিভি ফুটেজেও সিয়ামকে দেখা গেছে।
সিয়ামকে নেপাল থেকে আটকের পর গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে তোলা হয়। আদালত আগামী ১৪ দিনের জন্য তাঁকে সিআইডি হেফাজতে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য-প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা)—এই চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম