বহুল আলোচিত ছাগলকাণ্ডে জড়িত সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানান, মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে কোন মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি বার্তায়।
গত বছর কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে মতিউর রহমানকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা শুরু হয়।
তার আগে ছাগল কিনতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইফাত। ধানমন্ডির বাসায় ঈদের দিন ছাগলটি কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন ছাগলসহ ইফাতের ছবি জুড়ে দিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন- ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার অর্থের উৎস কী?
এ প্রশ্ন ঘিরে সামনে আসতে থাকে ইফাতের পরিচয়। ইফাত নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ও সংবাদমাধ্যমে বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মো. মতিউর রহমান।
ইফাতের বাবার পরিচয় ধরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল ব্যয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হল কী করে?
অবশ্য ছাগলটি ইফাত শেষ পর্যন্ত কেনেননি বলে দাবি সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইফাত শুধু ১ লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটির বুকিং করেছিলেন। তবে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে ছাগলটির তিনি আর নিয়ে যাননি।
বিষয়টি নিয়ে ইফাতের বক্তব্যও এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তার দাবি, ইমরান হোসাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে তার ‘অনুরোধে’ ছাগলটি নিয়ে প্রচারের জন্য এতটা দামের কথা বলে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি।
মতিউর রহমান এ আলোচনায় ‘ঘি ঢেলেছেন’ ছেলের পরিচয় ‘অস্বীকার’ করে। একটি টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।
এরপর ইফাতের পরিচয় ও পরিবার নিয়ে ফেইসবুকে নানা তথ্য আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়।
এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা।
এ সংসদ সদস্য বলেন, ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের (স্ত্রীর) ছেলে। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি নাম লেখান রাজনীতিতে। তিনি এখন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
মতিউর রহমান এর আগে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলের, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেসব দুদক তদন্তও করেছে।
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মতিউরকে এনবিআরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাদ পড়েছেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ থেকেও। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর পরিবারের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম