ইহকালের শান্তি, পরকালের মাগফেরাত এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখ লাখ মুসল্লির ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর।
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা রূপ নেয় ধর্মীয় নগরীতে। ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত সকাল ৯টা ১ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা ২৩ মিনিটে শেষ হয়। ২২ মিনিট ধরে চলেছে এবারের আখেরি মোনাজাত।
মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি, কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. জুবায়ের হাসান। মোনাজাতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন আখরি মোনাজাতে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, মহানবী হযরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে মোনাজাত শুরু হয়। মোনাজাতে ইজতেমার কামিয়াবি, অংশগ্রহণকারীসহ সব মুসলমানদের গুনাহ মাফ, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, বিশ্ব শান্তি, বিশ্ববাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
গত তিনদিনে শীত-বৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়দান। শিল্প নগরী টঙ্গী ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী ময়দান ও আশপাশের এলাকায় স্থান না পেয়ে যে যেখানে পেরেছেন বসে পড়েন রাস্তায়, খোলা মাঠে বা বাসার ছাদে কিংবা যানবাহনেই। তবুও তাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আখেরি মোনাজাতে যেকোনোভাবে অংশ নিতে পেরেই তারা খুশি।
আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে দলে দলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যরাত থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন মুসল্লিরা। তবে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মেট্রোরেলে করে ইজতেমা এলাকায় এসেছেন অনেকে। এতে অফিস সময়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে।
জানা গেছে, ইজতেমায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, পাকিস্থান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, খিরগিজস্থান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্ডান ও দুবাইসহ বিশ্বের ৬১টি দেশের প্রায় এক হাজার ৯শ’ বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
আখেরি মোনাজাতের দিন আজ রোববার ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এরপর কিছু সময় নসিহতমূলক আলোচনা করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।
ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের যাতায়াত সহজ করতে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে গাজীপুরের তিনটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। মোনাজাত শেষে আজ রোববার দুপুর ২টার পর সড়কগুলো আবার খুলে দেওয়া হবে।
সড়ক তিনটি হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া মোড় থেকে টঙ্গীর মন্নুগেট সড়ক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব সড়কে ইজতেমার মুসল্লি বহনকারী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলতে পারবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি যেমন অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যমকর্মী বা বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
বিশেষ ট্রেন : টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা মো. রাকিবুর রহমান জানান, বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন রুটে প্রায় ১০০টি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম