মোঃলোকমান হোসেন,যশোর জেলা প্রতিনিধি:-যশোর কেশবপুরে হেলথ কেয়ার হসপিটাল(প্রাঃ) লিমিটেডে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় শুক্রবার বিকেলে সচিন বিশ্বাস নামে এক হতদরিদ্র মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের স্ত্রীর দাবি,জোর করে রাইস টিউব পরানোর সময় খাদ্য নাড়ি ছিড়ে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।এ মৃত্যুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ভাড়াটে মাস্তান এনে হুমকি দিয়ে নিহতের লাশ তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সুমিত্রা বিশ্বাস রোববার যশোরের সিভিল সার্জন,কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কেশবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে,২১ জুন সকাল ৯ টার দিকে পার্শ্ববর্তী কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া(কাশিয়াডাঙ্গা)গ্রামের মৃত অনন্ত বিশ্বাসের ছেলে মৎস্যজীবী সচিন বিশ্বাসের প্রচন্ড জ্বর ও পেট ব্যথা শুরু হলে কেশবপুর শহরের হেলথ কেয়ার হসপিটাল (প্রাঃ) লিমিটেডে আনা হয়।এ সময় ভর্তি ফি-১শত,ডাক্তার ফি-৩শত,পরীক্ষা নিরীক্ষা ফি-২ হাজার,ওষুধ ক্রয় বাবদ ১৪শত টাকাসহ মোট ৩ হাজার ৮ শত টাকা কাউন্টারে জমা দেয়ার পর তাকে ভর্তি করা হয়।
সচিনের স্ত্রী সুমিত্রা বিশ্বাস জানায়, তার স্বামীকে বেডে নিয়েই কোন পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই ডাক্তার সামসুজ্জামান রাইস টিউব পরায়। কিছুক্ষণ পর রোগীর নাক,মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে আমি বিষয়টি হসপিটালের ডাক্তার সামসুজ্জামানকে জানিয়ে রাইস টিউব খুলে দিতে অনুরোধ করি।এ সময় ওই ডাক্তার আমাকে জানায় টিউব খুলে দিলে যদি রোগী মারা যায় তার দায়িত্ব তোমাদেরই নিতে হবে,আর টিউব পরানোকালে মৃত্যু হলে তার দায়িত্ব আমিই নেব।তখন সে স্বামীর কাছে চলে যায়।এর প্রায় ৩ ঘন্টা পর সচিনের মৃত্যু হয়।
স্বামীর মৃত্যুর পর ডাক্তার সামসুজ্জামান তাকে জানায়-তার স্বামীর যক্ষা ও কিডনি নষ্ট ছিল যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু ওই হসপিটালের স্বামী সচিনের ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্টে যক্ষা বা কিডনীর কোন সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করা হয়।রাইস টিউব সঠিক ভাবে না দেওয়ায় রক্ত ক্ষরণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।সুমিত্রা বিশ্বাস বলেন,আমার স্বামীর যক্ষা ও কিডনি নষ্ট ছিল না। মৃত্যুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই ডাক্তার সামসুজ্জামান শহরের কিছু ভাড়াটে মাস্তান এনে ভয় দেখিয়ে জোর পূর্বক এ্যাম্বুলেন্সযোগে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।(শনিবার ২২শে জুন)দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় অর্থাভাবে দাহ করতে না পেরে তার মরা দেহ কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী মহাশ্মাশানের পাশে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।নিহতের ভাই অশোক বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন,তিনি ভাইয়ের সৎকারের কাজ সম্পন্ন করে শনিবার বিকেলে ওই হসপিটালে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট চান।তখন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ দেবে না বলে তালবাহানা শুরু করে।এ সময় থানায় মামলাসহ সাংবাদিকদের জানানোর কথা বললে তড়িঘড়ি করে ৩ ঘন্টা পর রিপোর্ট দেয়া হয়।
এ সময় তিনি তাদের কাছে প্রশ্ন করেন,তার ভাইকে ভর্তির সময় কোন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হলো না।মৃত্যুর ১০ ঘন্টা পর কিভাবে রিপোর্ট দেয়া হলো?তখন তারা হুমকি দিয়ে বলে যা দেয়া হয়েছে তাই নিয়ে চলে যাও এবং সচিনের স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে এসো কিছু টাকা দিয়ে দেব।তবে শর্ত রয়েছে, আদালত বা থানায় অভিযোগ করলে আমরা কোন সহযোগিতা করতে পারবো না।এ ব্যাপারে ডাক্তার সামসুজ্জামান বলেন, কিডনি ড্যামেজ হওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)মোঃশাহিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার দীলিপ রায় বলেন,এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী সুমিত্রা বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।