মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), সাতক্ষীরা:: ভারতের ঘোজাডাঙা শুল্ক স্টেশনে অনলাইন পদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরু করায় আমদানি রপ্তাানি ও রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নেমেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। এ অবস্থা অব্যহত থাকলে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ি ও শ্রমিকদের মাথায় হাত উঠবে।
ভোমরা বন্দরের সিএণ্ডএফ এজেন্ট কর্মচারি এ্যসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ কুমার ঘোষ বলেন, ঘোজাডাঙায় অনলাইন পদ্ধতি চালু করায় সার্ভার জটিলতা বাড়ছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাািত না থাকা, দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাব ও কম জনবল দ্বারা দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানোয় লাগছে প্রচুর সময়। এতে ভোমরা ও ঘোজাডাঙ্গা বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম হঠাৎ ৭০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।
আগে যেখানে ভোমরা বন্দরে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০টি পন্যবাহী ট্রাক বন্দরের প্রবেশ করতো সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ায় দিন থেকে গড়ে ৯০ থেকে ১০০ টির বেশী গাড়ী ঢুকছে না। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ বন্দরে ট্রাক ঢুকেছে ১০৯টি।
আগে কাঁচামাল বিশেষ করে ফলসহ বিভিন্ন পচনশীল পন্য এ বন্দর প্রচুর প্রবেশ করতো। কিন্তু এখন বেশি সময় লাগার ফলে আমদানী কারকসহ ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এ বন্দর থেকে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেকার হয়ে পড়ছেন এ বন্দরের হাজার হাজার শ্রমিক। একই সাথে সরকারের রাজস্বও ঘাটতি হচ্ছে। আগে ভোমরা বন্দর দিয়ে বছরে এক হাজার কোটিরও বেশী টাকা রাজস্ব আদায় হলেও বর্তমানে এর পরিমান অর্ধেকেরও কম হতে বসেছে।
তিনি আরো জানান, ১৯৯৬ সালে থেকে মূলত ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে ইতিমধ্যে ভোমরা স্থল বন্দর স্বীকৃতি পেয়েছে।
সরকার প্রতিবছর প্রায় হাজার কোটি টাকা এই বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় করে থাকে। চলতি অর্থবছরে এই বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে এক হাজার ৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে হঠাৎ আমদানি রপ্তানিতে রীতিমতো ধ্বস নেমেছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন জানান, গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ঘোজাডাঙা বন্দরে ‘অটোমেশন সিস্টেম’ চালুর পর থেকেই সার্ভার জটিলতার মুখে পড়ে বন্দরটি।
ঘোঁজাডাঙ্গা বন্দরে দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে এ সমস্যা নিরসন হচ্ছে না বলে জানাগেছে। যে কারণে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি পণ্যবাহী ট্রাক ছাড় করাও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ফলে ভোমরা বন্দরে দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে হঠাৎ ধস নেমেছে।
আর এ কারণে ভোমরা স্থল বন্দরে একদিকে যেমন সরকারি রাজস্ব আদার আশংকাজনক হারে কমে গেছে, অপরদিকে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রমিকদের আগের মতো আর কাজ নেই, তারা বেকার হয়ে পড়ছে। এ সমস্য দ্রুত সমাধান না হলে ভোমরা বন্দর থেকে আমদানিকারকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে।
ভোমরা স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক ( ট্রাফিক ) মো: রেজাউল করিম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৫ মে থেকে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থল বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনলাইন কার্যক্রম চালু করেছে। গত রোজার ঈদের আগে থেকেই জটিলতা শুরু হয়েছে।
ঈদের পরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টি পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতো এখন সেখানে গড়ে ১০০টি ভারতীয় ট্রাকও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে না। ভারতীয় পারে অনলাইন কার্যক্রম চালুর পর সার্ভার জটিলতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি আরো জানান।