শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যেকোনো প্রজন্মকে দেশ ও জাতির যোগ্য নাগরিক ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে জন্মের পর থেকেই একজন ছেলে-মেয়ের শিক্ষা আবশ্যিক। প্রাথমিক কাজটি পিতামাতা করলেও প্রাতিষ্ঠানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা সৃষ্টিতে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিক্ষকগণ সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
সেই সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একজন মানুষ নিজেকে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষকের সাহায্য নিয়েছে।
আগের যুগে হাতেগোনা যে কয়েকজন শিক্ষিত হয়েছিল তারা প্রায় সবাই সম্ভ্রান্ত পরিবারের। তখনকার শিক্ষকরাও সেই সম্ভ্রান্ত ঘরের। একান্ত শখের বশে এবং সামাজিক প্রভাব ধরে রাখতেই নিজেদের শিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতেন তারা।
কিন্তু কালক্রমে এই শিক্ষা এখন সার্বজনীন রুপ লাভ করেছে। ফলে শিক্ষা-কার্যক্রমে ব্যাপকতা এসেছে। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
এটা বাস্তব যে, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী করে তুলতে সৃজনশীল শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করে তুলতেই শিক্ষকগণ ব্যতিব্যস্ত থাকেন। সেখান থেকে দু’চারজন আংশিক সৃজনশীল শিক্ষার সহিত পরিচিত থাকলেও অধিকাংশই থাকে অজ্ঞ। অথচ সরকারি সুযোগ সুবিধা সিংহভাগই এ স্তরে বিদ্যমান। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরটি সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত।
একজন শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ সৃজনশীলতা তৈরীতে এবং তাদেরকে সম্পূর্ণ যুগোপযোগী বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন করার গুরুদায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকগণ। অথচ এই স্তরে নেই সুষ্ঠ পরিকল্পনা, নেই পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বয়স উপযোগী পাঠ্যপুস্তক। শুধু এ স্তরের শিক্ষকগণ বিচক্ষণতার সঙ্গে তাদের সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে গড়ে তুলছেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ উপযোগী শিক্ষার্থী। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্যি স্বাধীনতার এত বছর পরও এ স্তরের ৪% মাত্র সরকারীকরণ হয়েছে।
সম্মানের পেশা হিসেবে এ শিক্ষকতাকে গ্রহণ করে যারা সমাজ, দেশ তথা সমগ্র জাতির আদর্শ নাগরিক হিসেবে বিপুল জনগোষ্ঠীকে গড়ে তুলছেন সেই মহান কারিগরদের করা হচ্ছে চরম অবহেলা। প্রাচীন যুগের চিকিৎসা, বাড়ি ভাড়া ভাতা ও মূলবেতনের ৪ ভাগের ১ ভাগ উৎসবভাতা বোধকরি পৃথিবীতে এত বড় অসম্মান আর কোন রাষ্ট্রের শিক্ষকগণ হননা।
এই পেশায় সম্মান অনুযায়ী সম্মানী না পেলে প্রকৃত মেধাবীদের এখন আর আকৃষ্ট করা যাবেনা।
মনে রাখতে হবে আত্মসম্মানবোধের পাশাপাশি শিক্ষকদের উপরও নির্ভর করে তার পরিবারের সদস্যরা। তাকে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয় পরিবার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের। সেখানে সম্মান তাকে খাওয়াবে পড়াবে না। এজন্য চাই অর্থ। আর যে পরিমাণ অর্থ সরকারের নিকট থেকে একজন শিক্ষক বেতন হিসেবে পায় তা দিয়ে পরিবার চালানো প্রায় অসম্ভব।
আর্থিক সচ্ছলতা মানুষের মানসিকতারও পরিবর্তন করে। একজন বোকা লোকও আর্থিকভাবে সচ্ছল হলে বুদ্ধিমান হয়ে যায়।
তাই শিক্ষকদের মানসিকতা, সৃজনশীলতা ও আন্তরিকতা আরও বৃদ্ধি করতে এবং সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষক, লেখক ও সংবাদকর্মী,
প্রদীপ কুমার দেবনাথ,
সহকারী প্রধান শিক্ষক,
ফান্দাউক পন্ডিতরাম উচ্চ বিদ্যালয়,
নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিভাগ ( বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি – নজরুল)