মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), সাতক্ষীরা::
একদিকে বিদ্যুতের গ্রাহকদের ‘প্রি-পেইড মিটারের’ প্রতি অধিকাংশ গ্রাহকের অনাগ্রহ। অপরদিকে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহককের প্রতিটি সিঙ্গেল ফেজ মিটারের জন্য প্রতি মাসে ৪০ টাকা এবং থ্রিফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রদান করা হচ্ছে। এদিকে প্রথমে গ্রাহকদেরকে ফ্রি মিটার দেয়া হলেও ৪/৫ মাস যেতে না যেতেই মিটারের দাম নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওজোপাডিকো খুলনা। মাসে সিঙ্গেল ফেজ মিটারের একজন গ্রাহক তার মিটার ক্রয় বাবদ (প্রতি মাসে একবার) ৪০ টাকা এবং থ্রি-ফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রদান করবেন। একজন গ্রাহককে ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে মিটারের জন্য এই টাকা পরিশোধ করতে হবে।
গ্রাহকরা বলছেন, প্রি-পেইড মিটারে ‘পোস্টপেইড’ যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। একদিকে চায়না প্রি-পেইড মিটার নিয়ে বিপাকে আছেন গ্রাহকরা। তার ওপর লোডের বিষয় নিয়েও আছে চরম বিপত্তি। এরই মাঝে প্রতি মাসে আবার বিলের সাথে যুক্ত হচ্ছে মিটারের ভাড়া। গ্রাহকদের অভিযোগ, কোন ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই মনে হচ্ছে সরকার প্রি-পেইড মিটার লাগানো শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, ১০ বছর ধরে মিটারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কোন মিটার যদি কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একজন গ্রাহক আবার নতুন মিটার নিলে তার ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের বিধান কী রকম হবে, এসব বিষয়ে কোন ধরনের প্রচারণা নেই সংশ্লিষ্টদের। গ্রাহকদের অন্ধকারে রেখে এ সিস্টেম চালু করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। সব মিলিয়ে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা ক্ষোভে ফুসছে।
ওজোপাডিকো খুলনা’র প্রকল্প পরিচালক আবু হোসেন বলেন, বিদ্যুতের গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার লাগানোর সময় আমরা মিটার ফ্রি দিয়েছি। তবে এখন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিদ্যুতের মাসিক বিলের সাথে মিটারের টাকা আদায়ের জন্য। তাই আগামী মাস থেকে গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের মূল্য মাসিক বিলের সাথে প্রদান করতে হবে। এমনিতেই একটি প্রি- পেইড মিটারের মেয়াদ ১০ বছর। আর এ ১০ বছরের মধ্যে মিটারটি নষ্ট হলে আমরা আবার নতুন মিটার লাগায় দিব বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওজোপাডিকো’র এক কর্মকর্তা বলেন, একটি প্রি-পেইড মিটার ক্রয়ে আমাদের খবচ পড়েছে ৪৮ ডলার। সেই সাথে ৩০ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়েছে। সে হিসেবে একজন সিঙ্গেল ফেজ মিটারের গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতিমাসে মিটারের জন্য ৪০ টাকা এবং থ্রি-ফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রদান করতে হবে। যা গ্রাহেকদের মাসিক রিচার্জকৃত টাকা হতে কেটে নেয়া হবে।
ওজোপাডিকো খুলনার প্রি-পেইড মিটারের প্রকল্প পরিচালকের প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত সংস্থাটির এ চারটি জোনে ৪৫ হাজার ৫০০ সিঙ্গেল ফেজ প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য ৪ হাজার ৮শ’ টাকা। এছাড়া ১ হাজার ৫০০ মতো থ্রিফেজ মিটার লাগানো হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য ২০হাজার টাকা বলে জানান তিনি। অবশিষ্ট মিটার পর্যায়ক্রমে লাগনো হবে বলে জানান তিনি।
ওজোপাডিকো খুলনার প্রি-পেইড মিটারের প্রকল্প পরিচালকের প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত সংস্থাটির এ চারটি জোনে ৪৫ হাজার ৫০০ সিঙ্গেল ফেজ প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য ৪ হাজার ৮শ’ টাকা। এছাড়া ১ হাজার ৫০০ মতো থ্রিফেজ মিটার লাগানো হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য ২০হাজার টাকা বলে জানান তিনি। অবশিষ্ট মিটার পর্যায়ক্রমে লাগনো হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরার মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক শেখ আব্দুল গোফরান বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার নিয়ে নানান ঝামেলায় আছি। বাড়তি কোন লোড দেয়া যায় না। আমাদের পুরনো মিটারটি খুলে যখন নতুন প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছিল তখন বলেছিল মিটারের জন্য কোন মূল্য নেয়া হবে না। এখন দেখছি প্রতি মাসে রিচার্জকৃত টাকা থেকে মিটারের ভাড়া কেটে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পিডিবি। এ যেন ‘পোস্টপেইড’ যন্ত্রণা।’ তবে অধিকাংশ গ্রাহক এখনও বিষয়টা পরিপূর্ণ ভাবে জানে না বলে তিনি জানান।
ফ্রি-মিটার ক্রয় বাবত প্রতি মাসে মাসের রিচার্জকালে কর্তনের বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি বলে উল্লেখ করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি এড. এনায়েত আলী। তিনি বলেন, প্রতি মাসে প্রি- পেইড মিটারের ভাড়া নেয়ার কথা আগে বলেনি ওজোপাডিকো খুলনা। এটা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বাড়তি বোঝা হবে। প্রতি মাসের রিচার্জকৃত টাকা থেকে মিটারের ভাড়া কেটে নেয়ার পিডিবির সিদ্ধান্তটি কোন অবস্থাতেই যৌক্তিক হবে না।
অন্যদিকে সাতক্ষীরার কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে, প্রি-পেইড মিটারের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই অবস্থান কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।