ব্যাংক ঋণের সুদহার যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোন দেশে ১৪, ১৫ এবং ১৬ শতাংশ সুদহার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এই সুদ প্রদান করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ভবিষ্যতে এই সুদহার যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে সম্পাদক পরিষদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম এবং এনজিও প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এসব এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন,ব্যবসায়ীরা ছাড়া কোন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যবসা করতে গিয়ে যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে খেলাপিতে পরিণত হয়েছেন তাদেরকে সহযোগিতা এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা এমন ব্যবস্থা করবো যাতে উভয় পক্ষ লাভবান হয় এবং দুই গ্রুপের মধ্যে ভিন্নতা থাকে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে আমরা ইনসলভেন্সি অ্যাক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভুয়া আমদানি এবং রপ্তানির মাধ্যমে যেসব টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়, তা সনাক্ত করার জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেকটি পণ্য স্ক্যান করার পর আমদানি এবং রপ্তানি হবে। যাতে করে কোনভাবেই অবৈধ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে না পারে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দু’টি পক্ষ-একটি হচ্ছে সিংহ, অন্যটি ছাগলের বাচ্চা এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বাজারে ৫০ হাজার কোটি, এমনকি ৫ লাখ কোটি টাকা ঢাললেও কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকবে। এ কারণে বাজেটের পর বাজার ভালো হবে এটি একটি মহল বুঝতে পারছে। এরা কম দামে শেয়ার কিনে সহজে বেশি মুনাফা করার উদ্দেশ্যে এসব করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেয়ারবাজার বুঝিয়ে ঠিক করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা কতজনকে বুঝাবো। দেশব্যাপী বিনিয়োগকারী রয়েছে। শেয়ারবাজারে শত শত কম্পোনেন্ট। এর একটি ঠিক করে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সবাইকে বোঝাতে হবে যেন শেয়ারবাজারে না বুঝে কেউ না আসে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শেয়ারবাজারের উন্নতি ছাড়া দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, বাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন করা হবে। আমরা বারবার এ বাজারকে নিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়তে চাই না। মানুষের গালাগালি শুনতে চাই না। এর জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।
আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশে শিল্পায়নের অমিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, আগামী ৫ বছরে দেশে অনেক শিল্প-কারখানা হবে। কেননা এখন অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আগে অবকাঠামোর অভাবে শিল্প-কারখানা কাক্সিক্ষত মাত্রায় হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির বিষয়ে আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে বলে তিনি জানান।
বৈঠকে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদপত্র শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্টের ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে তারা এই শিল্পের করর্পোরেট করহার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেন।
বৈঠক অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।