এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ফেভারিট—এমনটি বলেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ক্রিকেটার জস বাটলার ও মইন আলি। তবে শেষ পর্যন্ত ইংলিশদের জায়গা দিতেই বাদ পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
নেট রান রেট ব্যবধানে শেষ হয়ে যায় অজিদের বিশ্বকাপ। কিউইদের পর গ্রুপ-১-এর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিতে জায়গা করে নেয় ইংলিশরা।
এতেই বিশ্বকাপ ইতিহাসের একটি ধারা অব্যাহত থাকল। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোনো দলই পরপর দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়নি। আর কোনো দেশও স্বাগতিক হিসেবে শিরোপা নেয়নি। তবে একমাত্র দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন আসরের মধ্যে দু্ইবার শিরোপা জিতেছে।
২০০৭ আসর :
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রোটিয়াদের জন্য এটি ছিল দারুণ এক শুরু। গ্রুপ পর্ব থেকেই দারুণ ছন্দে ছিল স্বাগতিকরা। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে জয় নিয়ে সুপার এইটে পৌঁছায় তারা। বাংলাদেশকে সাত উইকেটে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারায় তারা।
সুপার এইটে ইংলিশ ও কিউইদের হারালেও ভারতের কাছে ৩৭ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বাদ প্রোটিয়ারা। নেট রান রেটে পিছিয়ে ছিল তারা। ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
২০০৯ আসর :
এই আসরের আয়োজক ইংল্যান্ড। ইংলিশদের প্রথম ম্যাচ ছিল ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অঘটনের শিকার স্বাগতিকরা। ইংলিশদের হারিয়ে চমকে দেয় নেদারল্যান্ডস। তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে হারিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় স্বাগতিকরা। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ইংলিশদের। সুপার এইট থেকে বিদায় নেয় আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। ফাইনালে মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। তবে শেষ পর্যন্ত লর্ডসে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
২০১০ আসর :
এই আসরের আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ইংলিশদের ও ৭০ রানে আইরিশদের হারিয়ে সুপার এইটে যায় স্বাগতিকরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার ও ভারতীয়দের বিপক্ষে জয়ে সেমিতে জায়গা করে নেয় স্বাগতিকরা। তবে শেষ পর্যন্ত সেমি থেকেই বিদায় নিতে হয় ক্যারিবিয়ানদের। আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানও বিদায় নেয় অজিদের কাছে হেরে। শিরোপা উৎসবে মাতে ইংল্যান্ড।
২০১২ আসর :
প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টির আসর বসেছিল এশিয়ার কোনো দেশে, আয়োজক শ্রীলঙ্কা। গ্রুপ পর্বের রানার্সআপ হয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় স্বাগতিক দল। চরম নাটকীয়তায় সবগুলো ম্যাচই জেতে শ্রীলঙ্কা। ক্রমেই ফাইনালে পা রাখে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ ক্যারিবিয়ানরা। আর ফাইনালে ট্রফির লড়াইয়ে হেরে যায় স্বাগতিকরা। চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবিয়ানরা।
২০১৪ আসর :
এবার বিশ্বকাপের আসর বাংলাদেশে। ঘরের মাঠে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দেয় মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দল। নেপাল ও আফগানদের হারায় টাইগাররা। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল হংকংয়ের কাছে হেরে বসে টাইগাররা। তবে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সুপার টেন-এ জায়গা হয় টাইগারদের। সুপার টেনে সব ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় স্বাগতিকরা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে শ্রীলঙ্কা। গেল আসরের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার প্রতিশোধ নেয় এই আসরে। ভারতকে হারিয়ে শিরোপার স্বাদ পায় লাসিথ মালিঙ্গার দল।
২০১৬ আসর :
এই আসরের আয়োজক আগের আসরের রানার্স-আপ ভারত। সুপার টেন পর্বে প্রথমে ম্যাচেই কিউইদের কাছে হেরে যায় ভারত। পরের ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। পাকদের হারিয়ে জয় তুলে নেয় ভারতীয় দল। তৃতীয় ম্যাচে ১ রানে বাংলাদেশ দলকে হারায় ভারত। শেষ পর্যন্ত সেমি থেকে বিদায় ভারতের। এ আসরের চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবিয়ান দল। শেষ ওভারের পরপর চার ছয় মেরে শিরোপা নিশ্চিত করেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট; যা ক্রিকেট ইতিহাসে এক নাটকীয় রূপকথা হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে।
২০২১ আসর :
বিশ্বকাপের এই আসরের স্বাগতিক ভারত হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে পুরো টুর্নামেন্ট হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে। এই আসরে পাঁচ ম্যাচের মাত্র এক ম্যাচে জয় পায় ক্যারিবিয়ানরা। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়ে গেল আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই আসরে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় পাঁচবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
২০২২ আসর :
এ বিশ্বকাপের ‘হট ফেভারিট’ তকমা নিয়েই আসর শুরু করে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। তবে প্রথম ম্যাচেই কিউইদের বিপক্ষে ৮৯ রানের হার। নেট রান রেটে পিছিয়ে ইংল্যান্ডকে জায়গা করে দিয়ে বিদায় নিয়েছে স্বাগতিকরা। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কারা হচ্ছে এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন।
সূত্রঃ আর টিভি