বছর ঘুরলেই কমে যাচ্ছে সম্পদের পরিমাণ। এভাবে প্রতি বছর একটু একটু করে গরিব হয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয়রা। মূলত ২০০৭ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা বা সংকটের পর সরকারগুলোর ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এমনটা ঘটছে। গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর) নতুন এক গবেষণা রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যৌথভাবে গবেষণাটি চালিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা নিউ ইকোনমিক ফাউন্ডেশন (এনইএফ) ও ইউরোপীয় গবেষণা সংস্থা ফাইন্যান্স ওয়াচ।
গবেষণা রিপোর্ট মতে, ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে সরকারের নেয়া ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে প্রতিবছর মাথাপিছু আয় কমেছে গড়ে প্রায় ৩ হাজার ইউরো। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ব্যয় সংকোচন নীতিতে বেশি কঠোর ছিল সরকারগুলো। কর্তৃপক্ষ চাইলে মাথাপিছু আরও অন্তত ১ হাজার ইউরো বেশি ব্যয় করতে পারত।
২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়ার প্রধান কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গৃহায়ণ খাতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। দেশটির বন্ধকি বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের শিথিল নিয়ন্ত্রণই মন্দার শুরুটা করেছিল।
অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সেই সময় ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যম মূলত জনসেবার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় কমানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়।
ইইউ দেশগুলোর ওই ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে এনইএফের গবেষক সামষ্টিক অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক ভ্যান লারভেন বলেন, মন্দা মোকাবিলায় সরকারগুলো যে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছিল, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। লারভেনের ভাষায়, ব্যয় সংকোচন নীতিগুলো ইউরোপীয় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আমাদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়ন থামিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঋণ ও ঘাটতি কমানোর ক্ষেত্রেই সরকারগুলোর মনোযোগী দেখা গেছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। ইউরোপের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়নি। কিংবা ঋণও কমেনি। বিপরীতে ব্যয় সংকোচন নীতি ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্ভাবনা নষ্ট করেছে।
গবেষণা রিপোর্ট মতে, ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপ যে সংকটে পড়েছিল, সেখান থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারেনি। সেই থেকে ইউরোপীয়রা প্রতিবছরই একটু একটু করে গরিব হয়েছে।
এরপর ২০২০ সালে শুরু হওয়ার করোনা মহামারির কারণে নতুন করে আবারও সংকটে পড়ে ইউরোপ। মহামারিকালীন সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বিপদ হিসেবে হাজির হয়েছে ইউক্রেন সংঘাত।