একেএম কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার একমাত্র আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশানটির সমস্যার শেষ নেই। বর্তমানে অভ্যন্তরীন এবং বাহ্যিক রুটে লোকাল ট্রেন ছয়টি এবং ঢাকাগামী দুটি ট্রেন আহসানগঞ্জ রেলস্টেশনে পাঁচ মিনিটের বিরতি নেয়। কৃষি প্রধান অঞ্চল হওয়ার কারনে পন্য পরিবহনের নিরাপদ যাত্রা রেল সেবার মান আরও বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আর ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের অনেক বড় বড় মানুষের পা পড়েছে স্টেশনটিতে।
উনিশ শত সাতাশ সালে আহসানগঞাজ স্টেশন স্থাপিতহয়। বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান, মহাত্না গান্ধী, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ অনেক মনীষীদের পদাচারন পরেছিল স্টেশনটিতে। অবহেলা আর অযত্নে ছারিয়ে গিয়েছে স্টেশনটির প্রাণ। স্টেশনটিকে কাজে লাগাতে পারলে এই অঞ্চলের অর্থনিতি বৃদ্ধিসহ নিরাপদ যাত্রা পাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
আত্রাই উপজেলার প্রায় একশত কিলোমিটার রেলসীমা অবস্থিত। এর মধ্যে আহসানগঞ্জ শাহাগোলা স্টেশনে তিনটি মাত্র লোকাল ট্রেন বিরতি নেয় আর আত্রাই আহসান গঞ্জ স্টেশনের দূরত্ব মাত্র পাঁচ শত মিটার হওয়ায় আত্রাই স্টেশনে কোনও ট্রেন বিরতি নেয় না বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাষ্টার মোঃ সাইফুল ইসলাম। যাত্রীদের অভিযোগ কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করলেও ট্রেনে উঠে তারা সিট পার না এবং টিকিট চেকারকে অভিযোগ করলেও কোন সমাধান তারা পান না।
অপরদিকে প্লাটফম নীচু হওয়ার কারনে যাত্রীদের ট্রেন থেকে উঠানামা করতে অনেক কষ্ট হয় অভিযোগ করেন যাত্রীরা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা একদম নেই বলে স্টেশনটি অনেক পুরোনো এবং ঐতিহ্যহী হলেও পরিবেশ এবং পরিস্থিতি ভালো না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা আহসানগঞ স্টেশনে পারাপারের জন্য ওভারব্রিজ না থাকায় রেল লাউনের মধ্যদিয়ে পারাপার নেক ঝঁকিপূর্ন এবং বিপদজনক বলে মনে করেন তারা। আর অবৈধ দখলদারদের কবলে রেলওয়ে অনেক সম্পত্তি চলে যাওয়ার কারনে দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে স্টেশনটি।
আর টিকিট কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তা বললেন, এখনও ব্রডব্যান্ড সংযোগ না থাকায় তাদের থ্রিজি (তৃতীয়প্রজন্ম) ব্যবহার করে যাত্রীদের টিকিট সেবা দিতে হচ্ছে। তাই টিকিট সংগ্রহ এবং যাত্রীদের কাছে তা পৌঁছাতে দেরির কথা স্বীকার করেছেন কর্মকর্তারা।
সিংড়া, রানীনগর, ভবানীগঞ্জ এবং আত্রাই উপজেলার মানুষদের পরিবহন এবং যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধাথে আত্রাই স্টেশনটি চালু হয়েছিল ১৯২৭ সালে। চালু হবার দুই বছর পর আত্রাই স্টেশানটি পাঁচ শত মিটার দূরে আহসানগঞ্জ স্টেশনটি চালু হয়। আত্রাইয়ে পতিসর বিশ্বকবি রবীন্দ্র ঠাকুরের কুঠি বাড়ি বা কাচারী বাড়ি থাকায় তিনি ট্রেনে করে আহসানগঞ্জ স্টেশনে নেমে তারপর নৌকায় করে কুঠিবাড়ি যেতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আহসানগঞ্জ স্টেশন মাষ্টার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, প্লাটফমটি নীচু হওয়ার কারনে যাত্রীদের ট্রেন থেকে উঠা নামা করতে কষ্ট হয়।প্লাটফরমটি দ্রুত সংস্কার করে যথাসময়ে যাত্রীদের সুবিধা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আর নষ্ট হওয়া রেললাইনের কথায় তিনি বলেন, রেল ইন্জিনিয়ারা মাঝে মাঝে মেরামতের কাজ করে করে যায়। এটাও খুব দ্রুত মেরামত করা হবে। কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য লোকাল ট্রেন বৃদ্ধির কথা জানান এই রেল কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ঐতিহ্য আর নানাবিধ সমস্যা নিয়ে চলছে নওগাঁর আত্রাইয়ে আহসানগঞ্জ স্টেশন। সাধারণ মানুষের দাবী খুব তাড়াতাড়ি স্টেশনটি সংস্কার না করলে রেল হারাবে তার ঐতিহ্য। অবহেলা আর অনিয়মের হত থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত এর সংস্কার, পরিচ্ছন্নসহ সকল প্রকার উন্নয়ন অতি জরুরী বলে মনে করেন স্থানীয় জনগন।