শিক্ষার উপকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন স্থায়ী করণে এ উপকরণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যথাযথ আকর্ষনীয় উপকরণ শিশুদের পাঠে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এবং শিশুরা বিদ্যালয়ের প্রতি অধিকতর আকৃষ্ট হয়। উপকরণের আভিধানিক অর্থ উপাদান এবং বিশেষ অর্থে একে প্রদীপন ও বলা হয়ে থাকে। যার অর্থ প্রকাশন বা উজ্জলকরণ অর্থাৎ যার মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে উজ্জলরূপে প্রকাশ করা যায়। এ উপকরণ শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরণের প্রভাবক। রসায়নের ভাষায় যার উপস্থিতি রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিকে তরান্বিত করে। তদ্রুপ শিখন শেখানো কার্যক্রমকে গতিময় এবং সফল করে তোলার জন্য যে সহায়ক উপাদান ব্যবহার করা হয় তাকেই বলে ক্ষাউপকরণ। চীন দেশে একটি প্রবাদ প্রচালিত আছে-‘দশ হাজার শব্দ ব্যবহার করে যা বুঝানো যায় না, একটি মাত্র ভালো ছবির সাহায্যে তা বুঝানো যায়।’ এই প্রবাদ থেকেই আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, উপকরণের কর্তা গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষাবিদগণ শিক্ষা উপকরণকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করলে থাকলে ও সাধারণভাবে উপকরণকে তিন ভাগে ভাগ করাা যায়। সেগুলো হলো-
১. শ্রবণযোগ্য উপকরণ: যেমন, রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ার, সিডি প্লেয়ার ইত্যাদি।
২. দর্শনযোগ্য উপকরণ: পোষ্ঠার, ছবি চার্ট, প্রজেক্টর ইত্যাদি।
৩. দর্শন ও শ্রবণযোগ্য উপকরণ: টেলিভিশন, সিনেমা, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি।
শিক্ষা উপকরণগুলো এমন হতে হবে যা পাঠের সাথে সমঞ্জস্যপূর্ণ, শ্রেনি উপযোগী, মানসম্মত এবং আকর্ষনীয়, সহজে ব্যবহার উপযোগী, শিখনফল অর্জনে সহায়ক, সুস্পষ্ঠ ও পরিচ্ছন্ন, সহজে সংরক্ষণ উপযোগী শিক্ষার্থীর সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী, দৃশ্যমান এবং এটি বহণযোগ্য ও টেকশই হতে হবে। পাঠের বিষয়বস্তুকে সহজবোধ ও শিখন স্থায়ীকরণে এ উপকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এটি বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করে, পাঠের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি, শিখনফল অর্জন নিশ্চিত, জটিল বিষয় সহজে উপস্থাপন, অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি, আনন্দক্ষন পরিবেশ সৃষ্টি, শিখন শেখানো কার্যক্রম সফল শিক্ষার্থীর অংশ গ্রহনণের সুযোগ সৃষ্টি করা, শিখনদীর্ঘস্থায়ী করা, শিখন দ্রæত বা ত্বরান্বিত করা। সর্বোপরী পাঠকে জীবনভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত করা।
এ উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ নিরাপত্তা কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যেমন-শ্রেণিতে প্রবেশ করেই উপকরণ প্রদর্শন না করা, উপস্থাপন পর্যায়ে যখন প্রয়োজন তখন প্রদর্শন করা, যতক্ষণ প্রয়োজন টাঙিয়ে রাখা,উপকরণ প্রদর্শনে শিশুদের সহায়তা নেওয়া, উপকরণ হিসেবে শ্রেণির শিশুদের ব্যবস্থা করা, সকলের জন্য দৃশ্যমান করে উপকরণ উপস্থাপন করা, শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি জিনিসকে প্রয়োজনে পাঠের সাথে সংশ্লিষ্ট করে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা এবং উপকরণের উপর প্রশ্ন করা বা উপকরন সম্পর্কে কিছু বলতে দেওয়া।
এ উপকরণগুলো আমরা বিভিন্ন উপায়ে সংরক্ষণ করতে পারি। যেমন শ্রেনি ও বিষয় অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন র্যাকে সাজিয়ে রেখে, শ্রেণি ও বিষয় উল্লেখ করে রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করে, ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ পৃথকভাবে সংরক্ষণ করে,ছোট ছোট উপকরণগুলো কাগজের বা কাঠের বাক্সে সংরক্ষণ করে, বাক্সের গায়ে উপকরণের নাম লিখে, বাঁধানো ছবি, চার্ট, পোষ্টার, মানচিত্র ইত্যাদি দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখে, বাঁধানো না হলে পেচিয়ে গোল করে র্যাকে রেখে,উপকরণ শুকনো জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করে ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করে আমরা উপকরণ সংরক্ষণ করতে পারি।
লেখক: নাজমা বেগম, সহকারী শিক্ষক,
তালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়লেখা, মৌলভীবাজার।