কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গোরকমন্ডল ফোরকানিয়া মাদ্রাসার বেহাত হওয়া ১.৩৩ একর জমি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার করার পর পুর্ব পুরুষের দানকরা ওই জমি চাষ করে তাতে মাষ কালাই আবাদ করেছেন দাতার ওয়ারিশরা।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল গোরক মন্ডল এলাকার ইসলাম ধর্মভীরু মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য ১৯৭৭ সালে ওই এলাকার আবুল হোসেন, ফজর আলী ও নজর আলী মিলে ১.৩৩ একর আবাদী জমি গোরক মন্ডল ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে দান করেন। তৎকালীন সময়ে মাদ্রাসাটি কিছুদিন চললেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থী সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালে স্থানীয় কয়েকজন চতুর লোক ওই স্থানে গোরক মন্ডল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে নামসর্বস্ব একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে আবুল হোসেন গং এবং অন্যান্যদের দানকরা প্রায় ৬ বিঘা জমি দখলে নেয়।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে দেখা যায়, প্রায় ৩০ হাত লম্বা একটি টিনসেড ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে বারোমসিয়া নদীর তীরে। মাদ্রাসার ঘর আর ঘরের ভিতর কয়েকখানা বেঞ্চ ছাড়া শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিছুই পাওয়া যায়নি সেখানে। দীর্ঘদিন থেকে পাঠদান বন্ধ থাকায় মাদ্রাসার ঘরে স্থানীয়দের খড়ি পাটকাঠি শ্যালো মেশিন ও গবাদী পশু রাখার সুবিধা হয়েছে। তাছাড়া রাতে আধারে ওই ঘরে মদ গাঁজা ও তাসের আড্ডা বসানোর অভিযোগ করেছেন অনেকে। সকাল ১১টার দিকে মাঠে ৩ জন শিক্ষার্থীর দেখা পাওয়া গেছে । তাদেরকে জিজ্ঞেসা করে জানা গেছে, তারা পাশ্ববর্তী বাগমারা মাদ্রাসায় পড়েন। আজ সাংবাদিক আসবে বলে তাদেরকে এই মাদ্রাসায় ডাকা হয়েছে।
দুপুর একটার দিকে ব্যাগ হাতে এক ব্যক্তি এসে পরিচয় দেন তিনি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। নাম একরামুল হক আজাদ।
প্রধান শিক্ষক দাবীকারী একরামুল হক আজাদ বলেন, করোনা কালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। তবে কাগজে কলমে মাদ্রাসা চালু দেখানো হচ্ছে।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ও মাদ্রাসা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসার টাকা দিয়ে পাশ্ববর্তী ন্যাঞ্জারকুটি জামে মসজিদে মক্তব পরিচালিত হয়ে আসছে। সামনের বছর থেকে মাদ্রাসা চালু করা হবে।
জমি দাতার ওয়ারিশ বয়েজ উদ্দিন কালু, খরেজ্জামাল মিয়া বলেন, আমাদের বাপ- চাচারা গোরক মন্ডল ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে ১.৩৩ একর জমি দান করেছেন। সে মাদ্রাসা ত্রিশ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেই সুযোগে আমাদের এলাকার কিছু টাউট লোক গোরক মন্ডল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ফোরকানিয়া মাদ্রাসার জমি গুলো অবৈধভাবে দখল করে খাচ্ছে। তারা জমি লিজ দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার টাকা আয় করছে। কিন্তু মাদ্রাসার ঘরটা ছাড়া শিক্ষক শিক্ষার্থী বেঞ্চ চেয়ার টেবিল কিছুই নাই। এমনকি মাদ্রাসার নামটিও লেখা নাই ঘরের কোন জায়গায়। তাই আত্নসাতকারীদের অবৈধ দখল থেকে আমরা আমাদের পুর্বপুরুষের জমি উদ্ধার করেছি।