তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভোটার তালিকায় নাম তুলতে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে জন্ম নিবন্ধনের কাগজ তৈরির অভিযোগ উঠেছে মুড়াউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন বিরুদ্ধে। গত শনিবার উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শনিবার (৮ই অক্টোবর) ছবি তোলার নির্ধারিত তারিখ ছিল। এইদিন সকাল ১১টার দিকে মুড়াউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন গ্রামতলা গ্রামের এনাম উদ্দিনের জন্মনিবন্ধনের মূল কাগজ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কক্ষে প্রবেশ করেন। বন্ধের দিন থাকায় সচিব ইউনিয়নে ছিলেন না। কয়েকজন ইউপি সদস্য সচিবের কক্ষে ছিলেন। তখন জাকির হোসেন সচিবের কক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সিল ওই কাগজে নিয়ে বের হন। কিছুক্ষণ পর আবারও তিনি সচিবের কক্ষে প্রবেশ করে পরিষদের গোল সিল নিতে গেলে ইউপি সদস্যরা তাকে বাঁধা দেন।
৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাফাত আহমদ তখন বলেন, ‘অফিস বন্ধ, দুইবার চেয়ারম্যানের সিল নিলেন, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরও দিলেন! কেনো?’ এ কথা বলতেই আবারও ইউপি সদস্যরা শিক্ষক জাকিরকে সিল নিতে বাঁধা প্রদান করে আপত্তি জানান এবং তারা ঘটনাটি ইউপি চেয়ারম্যান’কে অবগত করেন। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদ আহমদ বাবলু পরিষদে গিয়ে ঘটনাটির সত্যতা জানতে পারেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাফাত আহমদ।
তিনি বলেন, ‘শনিবার অফিস বন্ধ ছিল, সচিব ছিলেন না। আমরা কয়েকজন ইউপি সদস্য ছিলাম। আনুমানিক ১১টার দিকে জাকির স্যার সচিবের কক্ষে ঢুকে এনাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির জন্মনিবন্ধনের মূল কাগজে চেয়ারম্যান ও সচিবের সিল দেন। আমি তখন বলি অফিস বন্ধ চেয়ারম্যান নেই, আপনি সিল দিচ্ছেন কেন? তিনি কিছু না বলে বের হয়ে যান। ‘কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে ইউনিয়ন পরিষদের গোল সিল ওই কাগজে দিতে গেলে দেখি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর কাগজে তিনি নিজেই দিয়েছেন। তখন অন্য ইউপি সদস্য ও জনগনসহ তাকে আটকে চেয়ারম্যান’কে খবর দেই আমরা। পরে বিকেলে জাকির হোসেন তিনি চেয়ারম্যানসহ সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে আর এরকম ঘটনা ঘটবে না বলে এর পূনরাবৃত্তি হবেনা বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক জাকির হোসেনের দাবি তিনি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করেননি। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি জন্মনিবন্ধনের একটি প্রিন্ট কপি নিয়ে এসে আমার কাছে চেয়ারম্যানের চাচা পরিচয় দেন। জন্মনিবন্ধন সনদে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের কোনো স্বাক্ষর সিল ছিল না। তিনি চেয়ারম্যানের চাচা পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করায় ইউপি কার্যালয়ে উপিস্থিত সদস্যের সম্মতিতে আমি সিল মেরে তাকে চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর আনতে পাঠাই। আমি চেয়ারম্যান কিংবা সচিবের স্বাক্ষর জাল করিনি।
উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাহিদ আহমদ বাবলু বলেন, ‘আমি বাড়িতে একটি শালিশে ছিলাম। সাড়ে দুপুর ১২টার দিকে ইউপি সদস্য রাফাতের ফোন পেয়ে ইউনিয়নে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি শিক্ষক জাকিরসহ অন্য শিক্ষকগণও উপস্থিত রয়েছেন। জানতে পারি শিক্ষক জাকির ভোটার তালিকায় নাম তুলতে একজনের জন্মনিন্ধনের কাগজে আমার স্বাক্ষর জাল করে দিয়েছেন। তিনি ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছেন। পরে এলাকার গণমান্যব্যক্তি ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের উপস্থিতিতে জাকির হোসেন তার এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।’