ডিবিএন ডেস্কঃ গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ-ঢাকা রুটে প্রায় শতবছরের প্যাডেল স্টিমার সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ স্টিমার সার্ভিসের প্রতি ট্রিপে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা লোকসান ও যাত্রী সংকটের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেই ব্রিটিশ আমল থেকে প্রায় শতবছর ধরে স্টিমার সার্ভিসে যুক্ত থাকা পাঁচটি প্যাডেল স্টিমার ছিল পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। ঐতিহ্যবাহী এসব স্টিমারে ভ্রমণ করেছিলেন ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিশ্ববরেণ্য অনেক ব্যক্তি। তখন থেকেই ঢাকা-কলকাতা নৌপথে চলাচল করত এই প্যাডেল স্টিমার। এ ধরনের নৌযানের দুপাশে বিশালাকৃতির দুটি হুইল দিয়ে চালানোর জন্য এগুলোকে বলা হতো প্যাডেল স্টিমার। ১৯২৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয় পি এস মাহ্সুদ। এর পরের বছর পি এস গাজী ও পি এস আস্ট্রিচ নির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালে পিএস লেপচা এবং পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালে পিএস টার্ন নির্মাণ করা হয়। এসব স্টিমার প্রথম দিকে কয়লা থেকে উৎপন্ন বাষ্পে চলত।
১৯৮৩ সালে ডিজেল ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসিতে প্যাডল স্টিমারের সঙ্গে ২০১৪ সালে এমভি বাঙালি ও ২০১৫ সালে এমভি মধুমতি নামে দুটি মোটর নৌযান স্টিমার সার্ভিসে যুক্ত করা হয়। নব্বই দশকে গাজী স্টিমার আগুনে পুড়ে যায়। কয়েক বছর আগে টার্ন ও লেপচা সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব স্টিমার এক সময় ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত যেত। ২০১৯ সালের এপ্রিলে মোংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেলে নাব্যতা সংকটের কারণে খুলনা পর্যন্ত স্টিমার যেতে না পারায় বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করত। ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ যাওয়ার পথে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরের কাউখালী, হুলারহাট, চরখালী ও বড় মাছুয়া এবং বাগেরহাটের সন্ন্যাসী ঘাটে থামত। ২০১৮ সালের নভেম্বরে অস্ট্রিচকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড রিসোর্সেসের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। এরপর একমাত্র প্যাডেল স্টিমার মাহ্সুদ চলাচল করত মাঝেমধ্যে।
সর্বশেষ বাঙালি ও মধুমতি (মোটর নৌযান) স্টিমার দুটি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা সদরঘাট থেকে মোড়েলগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। আবার বুধবার ও শনিবার মোড়েলগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত।