তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘেঁষা মাধবপুর ইউনিয়নের দলই চা বাগানের অফিস কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কার্যালয়ে রক্ষিত অর্ধশত বছরের জরুরি সকল নথিপত্র। আগুন নেভানোর চেষ্টাকালে কার্যালয়ের দুই নৈশ প্রহরী শ্রী প্রসাদ পাশী (২৬) ও সৎ নারায়ণ রাজভর (২৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত দু’জনকে সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
দলই চা বাগান সুত্রের বরাতে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে দলই চা বাগান অফিস কার্যালয়ের হিসাব রক্ষকের কক্ষ থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপকের কক্ষসহ সহকারী ব্যবস্থাপকের কক্ষ, জেনারেল কক্ষ, টিলাক্লর্কের কক্ষসহ পাঁচটি কক্ষ সম্পূর্ণভাবে আগুনে ভস্মিভূত হয়ে যায়। গভীররাতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় অফিসের কোন নথিপত্র অক্ষত অবস্থায় রাখা সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত ৪ টায় দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর কমলগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে যায়।
এদিকে দলই চা বাগানের অফিস কার্যালয়ের পাশে স্টোররুমে ডিউটিরত নৈশ প্রহরী বাবলু ফুলমালী জানায়, স্টোর রুমের বারান্দায় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত পৌনে তিনটার দিকে মুখোশ পরা একদল লোক আমাকে বেঁধে ফেলে। এ সময় তাদের সাথে থাকা অন্যলোকরা অফিসের দরজার কাঁচ ভেঙে অফিসের ভেতরে আগুন দেয়। আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন আমাকে বেঁধে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অফিসের বারান্দায় ডিউটিতে থাকা নৈশ প্রহরী শ্রী প্রসাদ পাশী ও সৎ নারায়ণ রাজভর এর শরীর পুড়ে গেছে। দু’জনই আহত অবস্থায় আমার কাছে এসে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলে আমি সাথে সাথে গিয়ে কারখানায় থাকা সায়রন ও পাগলা ঘন্টা পিটাই তৎপর করি। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিলো। পরে বাগানের চা শ্রমিকরা এসে ঘন্টা খানেক চেষ্টা করে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
দলই চা বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপক আজগর আলী খাঁন জানান, ১৯৭১ সালের পর থেকে অর্ধশত বছরের সকল নথিপত্র অফিস কার্যালয়ে রক্ষিত ছিলো যা পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। কিভাবে তা পুষিয়ে উঠবো বুঝতেছিনা। এই কার্যালয় থেকেই বাগানের চা শ্রমিকদের রুটি রুজির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। চা বাগানের ইতিহাসে এটাই প্রথম চা কার্যালয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটানা ঘটলো।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরি, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, মনু-দলই ভ্যালী সভাপতি ধনা বাউরীসহ চা বাগানের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় চা শ্রমিকরা প্রকৃত অপরাধীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানায়। এ ঘটনায় চা বাগানের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, দু’মাস পূর্বেও দলই চা বাগানের অফিস কার্যালয়ের হিসাব রক্ষকের কক্ষে রাতে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তখন তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এবারের আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এই আগুন লাগার ঘটানাটি পূর্ব পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন অনেকে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলেই আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলে মনে করছি।