অলিউর রহমান নয়ন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এ অবস্থায় বিশেষ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষজন। চুলা জ্বালাতে না পারায় এবং টিউবওয়েল তলিয়ে থাকায় তীব্র হয়ে উঠছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
অন্যদিকে টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে গো-খাদ্য নষ্ট হয়ে হয়ে যাওয়ায় একমাত্র আয়ের উৎস গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষজন। বন্যা কবলিত এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের শাহাজালাল বলেন, হামার এই চরের সোগগুলা বাড়ি অর্ধেকেরও বেশি তলে গেইছে। বাকি পরিবার উচুঁ জায়গায় চলে গেছে। হমরা না যায়া পরিবার নিয়া নৌকায় ও ঘরের ভিতর উঁচু করা মাচানে দিন-রাত পার করছি।
একই এলকার রহমত আলী বলেন, আমাদের নৌকা না থাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু জায়গায় যেতে পারিনি। ঘরের ভিতর কষ্ট করে আছি। সরকারী ভাবে ত্রাণ সহায়তা পেলেও তা রান্না করার মতো উপায় নেই।
খেয়ার আলগা চরের সদরুল ইসলাম বলেন, আমরা কষ্ট করে দিন পার করলেও গরু, ছাগল, ভেড়ার খাদ্য সংকট নিয়ে বিপদে আছি। একদিকে বন্যার পানিতে চারনভূমি পানির নীচে অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে পচে গেছে খড়ও। এই গবাদি পশুই আমাদের মূল আয়ের উৎস। এটা রক্ষা করতে না পারলে আমাদের বাঁচার উপায় থাকবে না।
এদিকে সরকারী ভাবে ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারীভাবেও কিছু এলাকায় সামান্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নে ৪শ শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মন্জু, মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি কুড়িগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুর এলাকায় ৩শ পরিবারের মঝে ১ কার্টুন করে বিস্কুট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাধ্যমত বন্যার্তদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নে যে পরিমান মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাতে বরাদ্দের বাইরে আরো সহযোগীতার প্রয়োজন হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩শ ৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আজ বুধবারের মধ্যে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।