মোঃ মোশফিকুর ইসলাম, নীলফামারীঃ নীলফামারীর ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের উপজেলা আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র রাহাদ আহমেদ মৃন্ময় সাথে একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমেদের খেলার মাঠে সাইকেল চালানো কেন্দ্র করে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মৃন্ময়ের মা উপজেলা কৃষি অফিসারের স্ত্রী তাদের কোয়াটারের জানালা দিয়ে দেখতে পেয়ে মাঠে গিয়ে সিয়ামকে মারধর করে টেনে হেচরে তাদের কোয়াটারের দিকে নিয়ে যায়। এরই এক পর্যায়ে তিনি তার স্বামী কৃষি অফিসারকে ফোন দিলে কৃষি অফিসার, অফিস থেকে উত্তেজিত হয়ে তাদের কোয়াটারের সামনে এসে সিয়ামকে মারধর ও তার বুকে লাথি মারে। এ সময় মাঠে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে সিয়ামকে মারার কারন জানতে চাইলে কৃষি অফিসার তাদের গায়েও হাত তুলেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় লোকজন সিয়ামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
কর্তব্যরত ডা. নাহিদা বলেন, শিশুটি গায়ে ও বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। শিশুটিকে বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সিয়াম পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে।
জানাযায় সোমবার বিকালে ডোমার উপজেলা পরিষদ হেলিপ্যাড মাঠে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যায় বিষয়টি জানতে পেরে মোফাজ্জল হোসেন মাঠে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদে কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে যান। এবং কৃষি অফিসারের কাছে তার ছেলেকে মারধরের কারন জানাতে চাইলে উভয়ে তর্ক বির্তকে জড়িয়ে পরেন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আটক করে।
ওইদিন রাতে কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বাদী হয়ে ৬জন নামীয় ও অজ্ঞাত নামীয়দের নামে সরকারী কাজে বাধা,অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে থানায় মামলা করেন। মামলা নং-৬, তাং-২১/৬/২২। ওই মামলায় মোফাজ্জল হোসেন ও সৌরভ নামে দুইজনকে আটক করে মঙ্গলবার সকালে আদালতে প্রেরন করেন পুলিশ।
আহত শিশুটির মা স্বপ্না আক্তার জানান, তার ছেলে সিয়াম দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ্য। তার খাদ্যনালি চিকন হয়ে যাচ্ছে। ৫ম শ্রেণিতে পরলেও অসুস্থ্য থাকার কারনে তাকে খৎনা দেওয়া যায়নি। অপারেশনে জন্য দ্রুত ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, আমার ছেলে ভুল করলেও তিনি আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অসুস্থ্য ছেলের বুকে লাথি মারেন। একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানার জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার সেলফোনে ফোন দেওয়া হলে ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া এটি ডোমার উপজেলা পরিষদের বিষয়। তারা বসে হয়তো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রমিজ আলম জানান, সোমবার সন্ধ্যায় অফিসে এসে কিছু লোক হামলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
ডোমার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদের আদালতে মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।