মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানঃ উজানের ঢলে দেশের নদ-নদীর পানি বেড়ে উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও নীলফামারী জেলার ছয়টি স্থানে বন্যা রক্ষা বাঁধ ধসে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববারের বন্যায় অসংখ্য বাড়ি-ঘর ভেসে গেছে। পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩২টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। রৌমারীর ২১টি বিদ্যালয়ে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ডুবেছে ১০৭ হেক্টর জমির ফসলও। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় দুর্ভােগে পড়েছে মানুষ। ডুবেছে রংপুর-লালমনিরহাট-গাইবান্ধাসহ তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চলও। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। বেড়েছে যমুনার পানিও।
এছাড়া তিস্তার পানি এখন বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি ছিল বিপদসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে। যেকোনো মুহূর্তে তা বিপদসীমা ছারিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এই নীলফামারীর ডিমলার ছাতনা এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারি, এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে এই সব এলাকার উঠতি বাদাম, আমনের চারা, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হয়েছে। বড় বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে গত ৪ জুন সকাল ছয়টা থেকে ১২ জুন সকাল ছয়টা পর্যন্ত ১৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এই অঞ্চলে। এর মধ্যে রোববার সকাল ছয়টার আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৮ মিলিমিটার। এখনও বৃষ্টি অব্যাহত আছে।
এদিকে শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বেড়েছে নদ-নদীর পানি। এতে ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ এখন পর্যন্ত পানিবন্দি। এসব জায়গায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট, বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি।
অন্যদিকে নেত্রকোনার কোমলাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র রোববার জানিয়েছে, মেঘনা নদী ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, পদ্মা এবং যমুনা নদীগুলো মঙ্গলবার পর্যন্ত ফুলে উঠতে পারে। কুড়িগ্রাম, সিলেট ও শেরপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ দেশের সর্বোচ্চ ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সুনামগঞ্জের লাউরেরগড়ে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত আসাম এবং মেঘালয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করবে।