মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা জেলা মুরাদনগর উপজেলার ১৫নং নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের হতদরিদ্র অসুস্থ ১১৫ বছরের দুধনেহের। দীর্ঘদিন থেকে অভাবী সংসারে অসহায় ভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। এলাকার লোকজন থেকে জানা যায় তার বয়স ছিল প্রায় ১১৫ বছর কিন্তু তার জাতীয় পরিচয় পত্রে তার জন্ম তারিখ দেওয়া ছিল ১৯২০, যার হিসাব অনুযায়ী তার বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। তার দেখা দিয়েছিল শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগ।
৫০ বছর আগে তার স্বামী মারা গিয়েছিল। তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তার জীবনের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। তিনি মানুষের বাড়ীতে কাজ করে সংসার এবং ছেলে মেয়েদের লালন পালন করে ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তিনি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন। এরপর থেকেই পরিবারে অস্বচ্ছলতা দেখা দেয়। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থায় তার রোগের চিকিৎসা করানো দায় হয়ে দাড়িয়েছিল।
সরেজিমনে দুধনেহের বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ঝরাঝীর্ণ একটি ঘরের মধ্যে শুয়ে ছিলেন। যে ঘরের মধ্যে অল্প বৃষ্টি হলেই পানি পড়ত, ছিলনা কোন টিউবওয়েল এবং কোন টয়লেট। তিনির ছেলে এবং ছেলের বউ এর কাছে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় দিলে কান্না জড়িত কষ্টের এসব কথা ব্যক্ত করেছিলেন। কোন রকমে পরের বাড়ীতে কাজকর্ম করে পরিবারের সংসার চালাই। নিজেদের চাষযোগ্য কোন জমি নেই। তার উপর মার চিকিৎসা করা। আমি আর চালাতে পারছি না। দুধনেহের বয়স্ক ভাতা প্রতি তিন মাস পর যে টাকা পান তা দিয়ে দুধনেহেরের এক মাসেরও চিকিৎসার টাকাও হতনা। এ কারণে নিদারুণ কষ্টে চলছিল অভাবের সংসার। অসুস্থ মা দুধনেহেরের চিকিৎসা করানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।
<<< মুরাদনগরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ১১৫ বছরের দুধনেহের>>>
সাংবাদিক মোঃ খোরশেদ আলম লেখা এই নিউজ ডিজিটাল বাংলা নিউজ ডট কমে প্রকাশিত হয়। পরে তা সাংবাদিক মোঃ খোরশেদ আলমের ফেইসবুকে ভাইরাল হলে উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে এবং মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিষেক দাশ দুধনেহেরের বাড়িতে যান এবং তার খোঁজ খবর নিয়ে কিছু সহযোগিতা করেছিলেন এবং দুধনেহেরের চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য তার ছেলেকে একটি অটোরিকশা দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয় গত সপ্তাহের বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এফসিএ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে একটি অটোরিক্সা দুধনেহেরের ছেলে হালিমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু যার চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য অটোরিকশা পেল ছেলে হালিম, সে আজ আর নেই আমাদের মাঝে। সে গত কয়েক মাস আগে মারা যান।
অটোরিকশাটি প্রদানের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তমাল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানোয়ারা বেগম লুনা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কবির আহম্মেদ প্রমুখ।
অভিষেক দাশ বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ‘‘ভিক্ষুক পুর্নবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় পূর্নবাসিত ভিক্ষুকদের নামের তালিকা করে ৪৫ হাজার ৫শত টাকা ব্যায়ে উপজেলার পদুয়া গ্রামের দুধনেহেরের ছেলে হালিম মিয়াকে একটি অটোরিক্সা প্রদান করা হয়েছিল।