হুমায়ুন কবির, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে কিশোর গ্যাংয়ের নির্মম হামলার শিকার হয়ে সৌরভ ইসলাম (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতে জেলা শহরের বড়মাঠ সংলগ্ন কবির ডাক্তারের বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সৌরভ আমানতুল্লাহ ইসলামি একাডেমীর ১০ম শ্রেণির ছাত্র। এবং শহরের হাজিপাড়া আদর্শ কলোনির শরিফুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদে ঘুরাঘুরি করতে মাঠে ছেলে মেয়েরা আসেন। রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে কিশোর বয়সী কিছু ছেলেদের চিল্লা-চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে লোকজন এগিয়ে যায়। পরে একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় আহত সৌরভ জানান,আমি সন্ধার দিকে শহরের দিকে ঘুরতে বের হই। চিপস কিনার জন্য কবির ডাক্তারের বাসার পাশে দোকানে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে পিছন থেকে ৪-৫ জন এসে আমাকে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে এবং একজন ধারালো খুর দিয়ে আমার পিছনে টান দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের কাউকে আমি চিনতে পারিনি।আমি মাটিতে শুয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
আহত সৌরভের বড় ভাই সজিব বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে কারো কোনো ঝামেলা ছিলো না। তবে যতটুকু জেনেছি তার বন্ধুদের সাথে প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাং’র পূর্বের বিবাদ ছিলো। সেই জের ধরেই আমার ভাইয়ের ওপরে হামলা করেছে।
সৌরভের পিতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই আমার ছেলেকে কে বা কারা মেরেছে। এবং আহত হয়ে জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সাথে সাথে সদর হাসপাতালে এসে দেখি আমার ছেলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ ও পিঠে ১৩ টির মতো সেলায় করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এসব উচ্ছৃঙ্খল বখাটে ছেলেদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
দিনে দিনে শহরে বেড়ে চলা কিশোর গ্যাং রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে জানার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত: কিশোর অপরাধ বর্তমানে একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এবং দিন দিন এদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। আজকাল মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক কিশোর-কিশোরীই বিপথগামী হচ্ছে। এসব বখাটে বা কিশোর অপরাধীর হাতে দেশের স্কুল-কলেজগামী কিশোরী-কিশোরীরা হরহামেশাই লাঞ্ছিত, অপমানিত ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
শিশুরা অসৎ সঙ্গ বর্জনসহ যে কোনো ধরনের লোভ-লালসা, প্রলোভন বা অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা যদি জীবনের শুরুতেই পরিবার থেকে পায়, তাহলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়। আরও আশার কথা, কিশোরদের মধ্যে সংবেদনশীল আচরণ, সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক জেলায় এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। সারা দেশে এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিশোর অপরাধ তথা কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম ও বিকাশ রোধে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে-এটাই সকলের প্রত্যাশা।