ছোট গল্পঃ গপ্পে- শ্যামা!
গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে খুব সহজেই বৈশাখী বাসের সিট পেয়ে গেলাম সচারাচর বৈশাখী লোকাল বাস হওয়ায়, বাসের সিট পাওয়া যায় না আমার গন্তব্য বাড্ডা আমার বাসায় ফেরা।
কি অদ্ভুত বৈশাখী বাসে বসে আছি আবার এখন বৈশাখ মাস চলছে বৈশাখ মাসে বৈশাখী বাসে ভ্রমণ করা বেশ লাগছে তো, আবার রমজান মাস শেষ মানে কাল পবিত্র ঈদ ঊল ফিতর।
বাসে বসে বই পড়ে সময় কাটানোর জন্য আমার পুরানো অভ্যাস তাই ব্যাগ থেকে বইটা বের করতেই একটা চিরকুট পরে গেলো, চিরকুটটা হাতে নিয়েই থোমকে গেলাম।
মনার হাতের লেখা চিরকুট!
সরল-!
তোমার নামটা কিভাবে সরল রাখা হয়েছে সেটা জানতে চাইনি কখনও কিন্তু তুমি যে কখনোই সরল ছিলে না তা আমার চেয়ে পৃথিবীর কেউ যে জানে না, তোমার সরলতার আড়ালে যে কতশত জিলাপির প্যাঁচ তা তোমাকে প্রথম থেকেই জানতাম। কিন্তু কখনও বলিনি যেমন করে তুমি নিজেকে লুকিয়েছো আজ পর্যন্ত আমার থেকে।
ভেবেছিলাম তোমার সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না, তবুও দেখ হয়ে গেল, সরল তুমি শুধু নিজেকেই ভালোবেসেছো মনা কে নয়, আর মনা কে তো নিঃলজ্জের মত গলা চেপে মেরে ফেলেছো যেদিন মনা কে ছেড়ে নিরবে পালিয়ে গিয়েছিলে। সরল কে ছাড়া তো মনার কোন অস্তিত্ব নেই, সে মনা কি করে বেঁচে থাকে বল, যে মনা কে জীবন কি, কেমন আর কতটা সুন্দর শিখিয়েছিলে, বুঝতে শিখিয়েছিলে প্রেম আর ভালোবাসা কিভাবে মানুষকে বাঁচতে শেখায় সেই সরল, হ্যাঁ তুমিই মনা কে ভালোবাসতে শিখিয়ে আবার মেরেও ফেলেছিলে, বুঝিয়ে দিয়েছিলে ভালোবাসার মানুষটি জীবনে না থাকলে জান্ত মরা হয়ে বেঁচে থাকে- সরল আমি তোমাকে আর তোমার ভালোবাসা ছাড়া আজ সত্যি জান্ত মরা হয়েই বেঁচে আছি – মনা!
চিরকুট টা পড়া শেষ হতে না হতেই হাত থেকে পরে গেলো, শুধু হাত নয় পুরো শরীরটাই যেন অবোস হয়ে গেলো, দম আঁটকে গেলো বোধহয়, শুধু মনে হলো এত বছর পর কি করে এই মনার সাথে সারাটাদিন কাটালাম।
শুরুটা দিনের প্রথম প্রহর, ঠিক আটটায় কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ট্রেনের কেবিনে বসে কেবলই কবিতার বইটা হাতে নিয়ে পড়তে যাবো, উদাসী মনে জানালার দিয়ে আকাশ দেখছি, হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডেকে বলছে একটু ঠিক হয়ে বসবেন প্লিজ, একটু বাচ্চাটাকে ধরুন আমি সুটকেসটা উপরে রাখবো তাহলে বসতে সুবিধা হবে, উচ্চস্বরে বলে উঠলো কি শুনতে পাননা নাকি,সরে বসুন একটু জায়গা দিন। চিরদিনই আমি বেখেয়ালি তার কথার কোন কর্নপাত না করে আগের মতই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। এবার ভদ্র মহিলা রেগে গিয়ে বললো এই যে ভদ্রলোক আপনি কি দিনের বেলা আকাশের তারা শুনছেন, আমি বলে উঠলাম হুম, দেখতে পারলে তো বেশ ভালো হতো।
আর হ্যাঁ আপনি নিজের কাজ রেখে কেন আমাকে বিরক্ত করছেন বলুন তো, বলতেই ভদ্র মহিলাকে দেখে কপালে চোখ আটকে গেলো- মনা তুমি, তুমি এখানে কি করে এলে মনা!
হঠাৎই যেন আমার সমস্ত হৃদযন্ত্র থেমে গেলো যেন মুখের কথা চিরতরে থেমে গেলো, আমি কোন কিছু না বলে নিরবে আবার জানালা দিয়ে আকাশ দেখা শুরু করলাম, আমার মনের কোণে জমে থাকা সমস্থ ব্যথা যেন সাগরের ঢেউয়ের মত উপরে এসে আমার বুকেই আচরে পরলো, শুধু মনে হতে লাগলো এত বছর পর তুমি কেন মনা, কেন এভাবে আমার সামনে, আর এভাবেই একদিন আমার সামনে এসে আমার সমস্ত পৃথিবী উলটপালট করে দিয়েছিলে, তারপর থেকে আর আমার জীবন স্থিতিশীলতা ফিরে পাইনি, খুব মনে পড়ছে সেই প্রথম দিনের কথা। বৈশাখী ঝড়ের বিকালে জলোচ্ছ্বাসের মতই আমার সামনে এলে তোমার মামার সাথে করে, আমি তখন ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাড়ি যাবার জন্য ভ্যনের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম হঠাৎ তুমি জুয়েলের সাথে এসে হাজির হলে, আমার ছোটবেলার বন্ধু জুয়েল তো আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো, বন্ধু তুই এতদিন পর কোথায় ছিলি এতদিন, তোর সাথে কতদিন পর দেখা, তোর কথা ক’দিন ধরে ভাবছিলাম, যাক খুব ভালো হলো, এবার আমার একটা চিন্তা কমলো, আমি বললাম কিসের চিন্তা তোর?
আরে চিন্তা তো নিজেকে নিয়ে না রে পাগলা, যত চিন্তা তো সব এই মনা কে নিয়ে, সেই প্রথম তোমার নামটা জানা হলো, মনা শুনতেই কলিজায় একটা কাটা দিয়ে উঠলো, “মনা” বাহ বেশ সুন্দর নাম, যদিও তখনো তোমার মুখটা তেমন করে দেখা হয়নি, কারণ আমি বরাবরের মতোই নিজের মধ্যে থাকি, কিন্তু তুমি যখন আঁর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তখন নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল, কারণ আমার যে হ্যানলাপাতলা শরীর তার উপর মাথার চুলের অবস্থা খুব করুন মানে উত্তরাধিকার সূত্রে আমি টাকওয়ালা মানে টাকলা মামা, মানে বন্ধুরা এভাবেই ডাকে আর কি, তাই সত্যি নিজের মধ্যে একটা অস্বস্তি কাজ করে সব সময়।
হঠাৎ জুয়েলের হাতের ধাক্কায় নিজেকে ফিরে পেলাম, বলছে বন্ধু সরল তোকে একটা উপকার করতেই হবে, আমি বললাম কি উপকার করবো আগে তো বলবি, বললো তাহলে শুন এই যে এটা মনা আমার বড় আপার বড় মেয়ে তখন তুমি আমাকে সালাম দিলে আমি তোমার সালামের উত্তর দিলাম, জুয়েলের পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা একটু ভিন্ন রকম হয়, যাইহোক বন্ধুদের মধ্যে জুয়েল সবসময়ই অনেক পপুলার আর খুব মন খোলা ভালো মানুষ ছিল আর কি।
বন্ধুদের মধ্যে আমি কেন জানি কিছুটা অবহেলিত ছিলাম কিন্তু জুয়েল আমাকে বুকে টেনে নিয়েছিল তার সকল কাজে আমাকে ছাড়া চলতই না, আমাকে যেমন সবার চেয়ে ভালোবাসতো তেমনি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতো।
যাইহোক জুয়েল আমাকে সরাসরি বলে ফেললো আজ থেকে মনা কে তোর কাছে আমানত রাখলাম, আমি বললাম কি বলিস এসব কিছুই বুঝলাম না, জুয়েল বললো শুন পরশু দিন মনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আমি চাই তুই মনার সব দেখভাল করবি, আমি তো তোকে অনেক দিন হলো এজন্যই খুঁজছিলাম, যাক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, দেখ তোকে পেয়ে গেলাম, কাল তুই মনা কে নিয়ে ঢাকায় যাবি, মনার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করবি আর তোদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই ভর্তি হওয়া তো মনার স্বপ্ন, কিরে তুই মনার স্বপ্ন পূরণ করে দিবি না, তোর কাছে এই অনুরোধ করতে পারি না, আমি বললাম ঠিক আছে আল্লাহ ভরসা, আমি চেষ্টা করবো।
জুয়েল বললো, চেষ্টা করবি মানে তোর সব কিছু করতে হবে, আরে আমি তোর জন্য কি করিনি ভুলে গেলি নাকি, আমি তখন খুবই লজ্জা পেলাম, বললাম ঠিক আছে আমি তোর আমানতের সন্মান রাখবো ইনশাআল্লাহ।
যথারীতি পরের দিন সকাল বেলা মনা কে নিয়ে সিরাজগন্জ রোড থেকে বাসে উঠে ঢাকার উদেশ্য রওনা হলাম।
হঠাৎ মাঝপথে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে আমার বাম কাঁদে মাথা রেখে। তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখতে দেখতে অজান্তেই কখন যেন একটা মায়ায় বাঁধা পড়ে গেলাম, বললাম আহা কি নিঃপাপ পবিত্র চোখটা ঘুমিয়ে আছে, এ জীবনে প্রথম কোন এক অপ্সরী এই হতভাগ্যের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে, নিজের অনিচ্ছায় কত কি যে সেদিন স্বপ্ন মত লাগছিল তা আর প্রকাশের ভাষা জানা নাই।
হঠাৎ আমার হাতে ধরে একটা বাচ্চা টান দিয়ে বলছে আঙ্কেল এই আঙ্কেল তোমার কি খুব মন খারাপ, তুমি কাঁদছো কেন, আমি বললাম না তো, তো তোমার কেন মনে হলো আমি কাঁদছি, বাচ্চাটা বললো এই যে তোমার চোখে পানি কেন তাহলে, আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আরে বাবা নাহ আসলে জানালার পাশে বসে আছি তো একটা পোকা চোখে পড়েছে তাই।
বাচ্চাটা বলছে ওহ তাই, এসো আমি তোমার চোখের পোকা বের করে দেই, আমি বললাম ধন্যবাদ বাবা পোকাটা এতক্ষণে বের হয়ে গেছে।
তখন ভদ্র মহিলা বাচ্চা টাকে টান দিয়ে ধরে বলছে শ্রভ্র অনেক হয়েছে এবার দুষ্টুমি থামাও, ভদ্রলোক টাকে আর বিরক্ত করো নাহ, বাচ্চাটা বলছে আম্মু তুমি চুপ থাকো, দেখছো না আমি আঙ্কেলের সাথে গল্প করছি, জানো আঙ্কেল, আম্মু আমাকে কারো সাথে মিশতে দিতে চায় না, আম্মু খুব পঁচা, আমি বললাম তোমার আম্মু তো ঠিকই বলেছেন সব মানুষের সাথে মিশতে হয়না বাবা।
বলতেই ভদ্র মহিলা বাচ্চাটাকে ধরে টান দিতেই কাছে এসে গেলো, ভদ্র মহিলা আমাকে দেখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো, বেশ কিছুক্ষণ পর বললো, সরল তুমি! সরল এখানে কি করে এলে, আমি বললাম এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ টাকে কখনও আপনার সামনে আশা করেননি তা-ই তো।
মনা নিজের অজান্তেই বলে ফেললো, হ্যাঁ ঠিক তাই, কখনও আশা করিনি তোমাকে দেখবো।
তারপর অনেকক্ষণ কেটে গেলো দুজনে চুপচাপ আমি সেই বেখেয়ালি মনে জানালার পাশে বসে আকাশ দেখছি, হঠাৎ মনা বলে উঠলো সরল কফি খাবে আমি কোনকিছু না ভেবেই বলে দিলাম না, জানো না আমি কফি খাই না৷ তখন মনা ভ্যগাচ্যাপা খেয়ে বলে উঠলো, ও আচ্ছা আমি তো ভুলেই গিয়েছিল তুমি কফি খাও না, তোমার তো চা চাই ৷ আর চায়ের সাথে ট্রা লাগে মানে চায়ের সাথে সিগারেট ছাড়া চলে না, আচ্ছা তোমার কি এখনও একটা চায়ের সাথে দুটা সিগারেট খাও নাকি চা ছেড়ে তিনটা করে সিগারেট খাও সরল?
আমি কোন কথা খুজে পেলাম না। মনে পড়ে গেলো একবার টিএসসিতে চায়ের সাথে দুটা সিগারেট খেতে দিয়ে তোমার সাথে তুমুলঝগড়া শুরু হয়ে গেলো আমি তো রাগ করে বাসায় চলে এসেছিলাম তাতে তুমি দুইদিন না খেয়ে ছিলে, তখন আমি তো তোমার রুমমেটকে দিয়ে অনেক অনুরোধ করে হল থেকে তোমাকে বের করে নিয়ে এসে রেস্তোরাঁয় নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলাম তোমায়। তোমার সে কি কান্না, সেই কান্নায় প্রায় সব খাবার তোমার চোখের পানিতে ভিজে দিয়েছিল আমি তো, তোমার এই অবস্থা দেখে রেস্তোরাঁর ভিতরেই কান ধরে ওঠবস করেছিলাম, আর তোমার সাথে এমন করে ঝগড়া করবো না, তুমি তখন হাসতে হাসতে আমাকেও নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলে কারণ তুমি জানতে আমিও দুই দিন হলো কিছু খাইনি।
এটা নিয়ে তোমার বান্ধবী থেকে শুরু করে সব রুমমেটরা তোমাকে খ্যাপাতো হা হা হা।
ভাবতে ভাবতেই অট্রোহাসিতে ফেটে পরলাম তখন তুমি ট্রেনের কেবিনে বসে কফি খাচ্ছিলে আমার হাসি দেখে তুমি অবাক হয়ে বললে, কি সরল পাগল হলে নাকি, আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম না না ঠিক আমি।
হঠাৎ একটা কথা মনে হলো তাই, হঠাৎ মনা বলে উঠলো রেস্তোরাঁয় তোমার কান ধরে ওঠবস করার কথা মনে পললো বুঝি সরল।
তখনই মনে হলো তুমি আমার ভেতরটা এখনও বুঝতে পারো মনা। ভাবতেই মনটা বিষাদে ভরে গেলো।
তুমি বললে, শুন সরল ট্রেনে ক্যন্টিনে যাও সেখানে একটা রং চায়ের সাথে দুটা সিগারেট খেয়ে মাথা ঠিক করে আসো তোমার সাথে অনেক গল্প আসে, যাও তাড়াতাড়ি আসবে আর আসার পথে শ্রভ্র এর জন্য একটা চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে এসো, ও হ্যাঁ টাকা আছে তো! না থাকলে নিয়ে যাও।
আমি বললাম টাকা নেই মানে আমাকে কি ভিখারি মনে করো নাকি মনা। টাকা আছে যথেষ্ট পরিমাণে আছে হুম।
মনা বললো এই ডায়লগ টা আর ছাড়োনি বলেই পাঁচশো টাকা হাতে নিয়ে বললো যাও তাড়াতাড়ি আসো, অনেক কথা আসে, আমি সেই সুবোধ বালকের মত টাকাটা নিয়ে নিলাম।
ট্রেনের ক্যন্টিনে চায়ের সাথে সিগারেট টানতে টানতে বইয়ের পাতার মত অতীতের সব কথা মনে পড়ে গেলো মনার সাথের।
হঠাৎ করেই মনা কে নিয়ে ঢাকায় চলে এলাম আমি তো মহসিন হলে থাকি মনা কে কোথায় রাখবো, তখন সুমির কথা মনে হলো আমার খুব কাছের বান্ধবী সে রোকেয়া হলে থাকে অনেক কষ্টে মনা কে রোকেয়া হলে থাকার ব্যবস্থা করলাম পরের দিন মনা কে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিয়ে সোজা চলে গেলাম মসজিদে। নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলার কুদরতি পায়ে সিজদাহ্ লুটিয়ে পড়ে পার্থনা করলাম, আল্লাহ মনা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে, আমার বন্ধু জুয়েলকে দেওয়া কথা রাখতে পারি, আর আমাকে বিশ্বাস করে মনা কে আমার কাছে আমানত রেখেছে তার সন্মান যেন রাখতে পারি।
আল্লাহর রহমতে মনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে হলো, তারপর তাকে হলে সিট পাইয়ে দিলাম।
ততদিনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা সামনে চলে এলো একদিন হঠাৎ মনা আমার ডিপার্টমেন্ট এসে কান্না জুড়ে দিলো, বললো সরল মামা তাড়াতাড়ি চলো এখনই বাড়ি যেতে হবে। আমি বললাম কেন কি হয়েছে বলো তো মনা, মনা বললো বাড়ি থেকে ফোন এসেছে বাবা খু্ব অসুস্থ, আমি বললাম বলো কি মনা, চল এখনি চল যাই।
মনা বললো আমাকে তুমি বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসো আমি একাই যেতে পারবো। আমি বললাম, কেন? কোন দিন কি একা বাড়ি গেছো? চলো, আমি তো আছি। মনা বললো, সরল মামা তোমার তো ক’দিন পর ফাইনাল পরীক্ষা তুমি থাকো আমাকে শুধু বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসো। আমি বললাম, আরে না পরীক্ষা কোন ব্যাপার না, তোমাকে একা ছাড়তে পারি না।
যেই বলা সেই কাজ, মনা কে নিয়ে সিরাজগঞ্জে রওনা হলাম। মনা রাস্তায় খুব কাঁন্নাকাটি করছিলো, তার মন যে কিভাবে জানতে পেরেছিলো এটাই তার বাবাকে শেষ দেখতে যাওয়া।
বাড়ি যাওয়ার পরে দিন মনার বাবা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। তার কিছু দিন পর মনা কে নিয়ে আবার ঢাকায় রওনা দিলাম। বাসে সারাটাপথ মনা আমার বুকে মাথা রেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদেই চলছে, আমি বারবার মনা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মনে হলো মনার মার কথা। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আসার সময় তিনি আমাকে বললেন, সরল ভাই আমার, তুমি আমার ছোট ভাই জুয়েল তোমার ভালো বন্ধু, তোমাকে বিশ্বাস করে মনা কে তোমার কাছে আমানত রেখেছি আজ মনার বাবা নাই, আজ থেকে ঢাকাতে তুমি ছাড়া মনার কেউ নাই। এখন তুমিই মনার অভিভাবক মনার সব দায়দায়িত্ব তোমার সরল, এর একটু অবহেলা করো নাহ, আমানতের খিয়ানত করো নাহ। এবার যাও তোমার দায়িত্ব পালন করো এটা এক মায়ের আদেশ।
নিজের অজান্তেই কখন যে অশ্রু ঝরে গেলো চোখ থেকে, আমার চোখের অশ্রুতে মনার কপাল ভিজে গেছে, মনা আমার বুক থেকে উঠে বলছে সরল তুমি কাঁদছো কেন, কি হয়েছে আমাকে বলো, মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে আমাকে দেখছে, এমন করে মনা কে তাকিয়ে থাকতে কখনও দেখিনি।
মনার কথা কোন জবাব না দিয়ে মনা কে বুকে সাথে শক্ত করে চেপে ধরে শিশুর মত কেঁদে দিলাম।
আমার হাতের সিগারেটের আগুনে আমার হাতের আঙুল পুড়ে গেছে টেরই পাইনি, টের পেলাম ক্যন্টিনবয় এসে যখন বিল চাইলো মামা বিল দিন সিগারেটের।
মনার ছেলে শুভ্র এর জন্য চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে ক্যবিনে এলাম মনা তো একপ্রকার চিৎকার চেচামেচি শুরু করলো, বললো সরল তোমার বোধবুদ্ধি কি এখন হয়নি সেই কখন গেলে, ছেলেটা আমার কখন থেকে চকলেটের জন্য আমাকে পাগল করে দিচ্ছে, বলেই আমার হাত থেকে চকলেটটা ছিনিয়ে নিয়ে শুভ্র কে দিলে বললো এই নে শুভ্র সবগুলো খাবি তারপর আমাকে খাবি।
মনার এই রুপ আমি কখনও দেখিনি আমি বললাম মনা তুমি এমন করছো কেন, আমার মনা তো কক্ষনও এমন ছিলো না, ততক্ষণে মনা জানালার ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিছে, আমি মনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম মনা, এমন করো না একটু শান্ত হয়,
যতক্ষণ তোমার পাশে আছি আমার শান্ত লক্ষী মনা কে দেখতে চাই, প্লিজ মনা দয়া করে শান্ত হও।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি যদি তোমার বিরক্তির কারণ হয়ে থাকি আমি কিছুক্ষণ বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তখন মনা চোখ মুছতে মুছতে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, না যাবে না সরল আমার কাছে এসে বসো। আমি মনার কাছে গিয়ে বসতেই মনা বললো তোমার হাতটা দাও। আমার হাত বাড়িয়ে দিতেই হাত ধরে বললো তোমার হাত পুড়লো কি করে সরল বলো, আমাকে বলো, আর কত নিজেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে সরল বলো, বলো কেন এমন করো কেন কেন? বলতে বলতে ব্যাগ থেকে Ice max বের করে আমার হাতে লাগিয়ে দিলো, তখন বুঝলাম তোমার পাগলামির কারণ, আমার পোড়া হাত তোমাকে অশান্ত আর পাগল করে দিয়েছে।
মনা বলছে কোথায় গিয়েছিলে সরল, বললাম কক্সবাজারে একটা বিশেষ কাজে গিয়েছিলাম এখন ঢাকায় যাচ্ছি, আর তুমি মনা, মনা বললো সে তার মার বাড়িতে যাচ্ছে, আমি আর কিছু জানতে না চাইলেও মনা তার কথা বলতে লাগলো।
সরল শুন আমি কোথায় আছি কি করছি তা তুমি যে জানতে চাইবে না তা আমি জানি তবুও বলছি, আমি কক্সবাজার কলেজের শিক্ষিকা আর আমার স্বামী UNHCR কক্সবাজারের দায়িত্বে আছে। বড় ছেলেটা বাবার সাথে কক্সবাজারেই ঈদ করবে আর আমি ছোটটাকে নিয়ে মার বাড়ি যাচ্ছি। আমি বললাম তোমার মা কেমন আছেন মনা? মনা বললো তেমন ভালো না যদি পারো একবার দেখে এসো, তুমি তো দেশে যাওনা তবুও নাহয় মা কে শেষ বার দেখে এসো।
আচ্ছা সরল তোমার ক’টা ছেলে মেয়ে, আমি বললাম নেই, মনা অবাক হয়ে বললো তোমার বউ কোথায়, আমি বললাম নেই, মনা বললো মানে কি সরল, আমি বললাম শান্ত হয়না বলছি। হঠাৎ করে আমার মা আমাকে বিয়ে দিয়েছিল তার তিন মাস পর বউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, মনা জানতে চাইলো তোমার বউ কেন ছেড়ে গেল সরল?
আমি শুধু বললাম, আমি তাকে ভালোবাসতে পানিনি তাই।
তারপর এক নিঃস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো আমাদের দুজন কে। ততক্ষণে আমরা ঢাকাতে পৌঁছে গেলাম তারপর মনা কে সিরাজগঞ্জের বাসে উঠিয়ে দিয়ে এলাম।
মনার জবানিকা-
সাঁই সাঁই বেগে ছুটে চলছে আমাদের গাড়িটা আমি জানালার পাশে মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে বাতাসের তীব্র ঝাপটা আমার বুকটা চুর্ণবিচুর্ণ করে দিবে কিন্তু আমার কলিজায় যে ঝড় বইছে বাইরের এই কালবৈশাখী ঝড়ের তীব্রতা আমার কাছে খুবই নগন্য।
এমনই একদিন কালবৈশাখী ঝড়ের বিকালে তুমি আমার জীবনে এসেছিলে সরল, জুয়েল মামা সেদিন তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন মনে মনে হাসি পাচ্ছিল লোকটা নাম সরল কিন্তু শরীর তো বাঁকাতেড়া, কি শুকনা আবার মাথায় টাকপরা, আর এই মরাডাংঙা লোকটার কাছে মামা আমাকে আমানত হিসাবে তুলে দিচ্ছে সেদিন সারারাত একটুও ঘুমাতে পারিনি। কাল আমাকে এই লোকটার সাথে ঢাকা যেতে হবে আবার তার আশ্রয়ে থাকতে হবে কিন্তু আমার সমস্ত অহংকার আর সংশয় পরের দিনই কেটে গেলো যখন আমি ক্লান্ত হয়ে বাসের মধ্যে এই লোকটার কাঁধে মাখা রেখে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তখনও খুব অস্বস্তি লাগছিলো কিন্তু রাস্তায় অনেক দুর যাবার পর আমার যখন প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলো আমি সরল মামাকে বললাম, মামা আপনার কাছে কি মাথা ব্যথার ঔষধ আছে? তিনি তো ভেবে পাচ্ছিলেন না কি করবেন কারণ তার কাছে ঔষধ নেই।
হঠাৎ বলে উঠলেন আচ্ছা ঔষধ তো নেই আমি তোমার মাথা টিপে দেই, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম তিনি কেন সরল, তার চোখ বলছিলো তার মধ্যে কোন পাপ নেই, আছে শুধু অসুস্থ মানুষ কে একটু সেবা করার ইচ্ছে।
তখন আমি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম মাথাটা টিপে দিন।
হ্যাঁ সেই দিন থেকে তুমি শুধু আমার সরল, শুধু আমার সরল, কারণ তুমি পরম মমতায় জড়িয়ে আমার মাথায় হাত রেখে যেভাবে যত্ন নিয়েছিলে সরল, পৃথিবীতে এমন যত্ন কেবল আমার মা ই নিয়েছিলো, মনে হয়েছিলো সরলের ভেতরের সরলকে জুয়েল মামা ঠিকই চিনতেন তাই সরলের কাছে এই মনা কে আমানত হিসাবে তুলো দিয়েছিলেন নিঃসন্দেহে, বিশ্বাস করে।
আর আমিও সেদিন থেকে তোমার সাথে চলা প্রতিটা দিন তোমাকে যতটা আপন করেছিলাম তার চেয়ে শতগুণ উশুল করে তুমি আমার যন্ত্র নিয়েছিলে সরল।
আমি ভুলিনি সরল যেদিন তুমি হাপাতে হাপাতে আমার সামনে এসে বলেছিল দেখ মনা দেখো, আমি অষ্ট্রলিয়ার ক্সলারশিপ পেয়েছি, বলেই সব কাগজপত্র জমা দিলে আমার হাতে আমি কাগজপত্র গুলো দেখে মন ভার করেছিলাম নিজের অজান্তেই, তুমি বলেছিলে মনা আমার ক্সলারশিপের জন্য তুমি খুশি হওনি?
আমি শুধু মন ভার করে বলেছিলাম সরল তুমি অষ্ট্রলিয়াতে চলে গেলে আমি যে একা হয়ে যাবো, কে দেখবে আমায় সরল, তুমি সাথে সাথে কাগজপত্র গুলো ছিড়ে ফেললে আর বলছিলে মনা তুমি একা হবে মানে, আর তোমাকে দেখার কেউ থাকবে না মানে কি এই আমি তোমাকে দেখবো আমি তোমার সরল, হ্যাঁ তোমার সরল তোমাকে ছাড়া জান্নাতেও যেতে রাজি তো নয়ই, অষ্ট্রলিয়া তো খুব নগন্য মনা।
তুমি শিশুর মত হাসতে হাসতে কাগজপত্র ছিঁড়ছিলে আর কথা গুলো বলছিলে, তোমার মাঝে বিন্দু মাত্র অনুশোচনাও দেখিনি, সেদিন তুমি শুধু অষ্ট্রলিয়ার ক্সলারশীপের কাগজপত্র ছিঁড়োনি সেদিন তোমার সব স্বপ্ন গুলো ছিঁড়েছিলে সরল। কারণ তুমি অর্থনীতির সব চেয়ে ভালো রেজাল্ট করা ছাত্র ছিলে তুমি প্রায়ই বলতে অষ্ট্রলিয়া থেকে ক্সলারশীপ নিয়ে এসে দেশের জন্য কাজ করবে দেশের অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করে দেশের অর্থনীতির অমুল পরিবর্তন করে দেশকে উন্নত করবে, দেশের সেবা করে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেবে।
অথচ আমার সেদিনের গোমড়ামুখের জন্য তোমার সব স্বপ্ন গুলো কুটিকুটি করে ছিঁড়েছিলে সরল শুধু আমাকে দেখাশোনার জন্য আমার কাছে থাকার জন্য।
মনে আছে সরল তোমার যখন পড়ালেখা শেষ হলো তুমি হল ছেড়ে ছোট্ট একটা বাসা নিলে তখন তুমি বেশ ক’টা টিউশনি করো আর প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের রোকেয়া হলের সামনে দাড়িয়ে থাকো আমাকে একবার দেখার জন্য মাঝে মধ্যে ঝগড়াঝাটি হলে রাত দুইটা নাই তিনটা নাই, প্রায়ই সময় তুমি হলের পিছনে আমার বারান্দার সামনে দাড়িয়ে থাকতে কতবার হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে মাঝে মধ্যে তো কান ধরে ওঠবস করতে, কতভাবে আমাকে জ্বালিয়েছো সরল।
তোমার চারপাঁচটা সরকারি চাকরি হলো যখনই পোস্টিং ঢাকার বাইরে হলো সবগুলো এ্যাপোয়েন্টলেটার তুমি আমার সামনে ছিঁড়েছো সরল, শুধু ঢাকাতে আমাকে একা ছেড়ে যেতে পারবর না বলে।
তুমি আমাকে তোমার বুকের মাঝে কতটা যত্নে আগলে রোখেছিলে তা কেবল আমিই জানি পৃথিবীর কেউ জানে না সরল শুধু আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানেন।
আমি একদিন তোমাকে জরুরি খরব পাঠালাম তুমি সন্ধ্যায় হলের সামনে আসলে। তুমি আসার পর বললে মনা তোমাকে এমন অস্থির লাগছে কেন বল কি হয়েছে খুলে বলো, দেখলাম আমার মুখ দেখে তুমিই বেশি অস্থির হয়েছিলে সরল।
আমি বললাম সরল খবর খুব খারাপ জুয়েল মামা মানে তোমার বন্ধু বিরাট এক কান্ড ঘটিয়েছে। তুমি বললে কি হয়েছে আগে খুলে বল মনা। মামা আমার বিয়ে ঠিকঠাক করে ফেলেছে, আজ ফোন করেছিলো কাল ঢাকায় এসে আমাকে নিয়ে যাবে। তুমি একটা কিছু করো সরল। তুমি হাসতে হাসতে বলেছিলে আরে এটা তো খুব ভালো খবর। যাক আমার জমানো সব টাকা দিয়ে তোমার পছন্দের সব গিফট কিনবো। হা হা হুম।
আমি চিৎকার করে বললাম সরল ফাজলামো রাখো সিরিয়াস হও, সত্যি মামা কাল আসছে আমাকে নিয়ে গিয়ে সত্যি বিয়ে দেবে, তুমি বললে সমস্যা কোথায় বিয়ে তো একসময় করবেই এখন করলে সমস্যা কি মনা।
আমি বললাম সমস্যা বিরাট আমার সামনে মাসে ফাইনাল পরীক্ষা এই সময় বিয়ে করতে পারবো না। তুমি বললে তাহলে এখন কি করবে মনা। বললাম আমার একটা পরিকল্পনা আছে, তুমি কাল ভোরে আমাকে নিয়ে অনেক দুর নিয়ে যাবে যেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে না।
তারপর মামা আমাদের আর সারাদিন খুঁজে না পেয়ে বাড়ি চলে যাবে আর বিয়ে থেকে আমি বেচে যাব, কেল্লাফতে।
আমার পরিকল্পনা তোমার ভালো লাগলো না তুমি ছাপ জানিয়ে দিলে এটা করা ঠিক হবে না, তোমার মামা অনেক কষ্ট পাবে, তারচেয়ে তোমার মামা কে বুঝিয়ে বল, প্রয়োজনে আমি জুয়েল কে বুঝিয়ে বলবো যেনে তোমার ফাইনাল পরিক্ষার পরে বিয়ে ব্যবস্থা করে চিন্তা করো না মনা। সব ঠিক করে দেবো।
আমি তখন অন্ধকারে তোমাকে বুকে ঝাপিয়ে পরে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ফেলেছিলাম, তোমাকে অনুরোধ করছিলাম সরল একটা কিছু করো আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
আমি বললাম সরল আমার সিধান্ত ফাইনাল আমি তোমার বাসায় কাল সকালে রেডি হয়ে আসবো তুমি তৈরি থেকো, আর কোন কথা বলবে না সরল এবার যাও, মনে রেখো কাল সকালে আমি তোমার বাসায় আসবো, নইলে তোমার মনা কে চিরতরে হারাবে, এবার যাও। তুমি কিছু একটা বলতে চাইছিলে সরল বলতে দেইনি, তুমি চলে গেলে।
পরের দিন সকালে আমি তোমার বাসায় গিয়ে হাজির হলাম, দেখলাম তোমার চিলেকোঠার দরজায় বড় একটা তালা ঝুলছে, আর তালার সাথে একটা চিরকুট, চিরকুট টা হাতে নিতেই আমি থঁ হয়ে দরজার সামনে বসে পড়লাম, শুধু মনে হলো সরল তুমি পারলে তুমি কি করে পারলে সরল৷ কি করে?
মনা-
তুমি আজ নিঃশ্চয়ই বুঝতে শিখেছো জীবন আর বাস্তবতা কি, তাই বলছি এবার আমার ছুটি নেবার পালা তোমার মামার আমানত আজ সহিসালামতে ফেরত দিলাম। আর যদি এতটুকুন ক্ষতি করে থাকি তো কখনও ক্ষমা করো না মনা,—- তোমার সরল!
বারবার মনে হলো সরল তুমি শুধু আমার মামা আর মায়ের আমানতের কথা চিন্তা করলে সরল, চিন্তা করলে না আমাকে সরল, একটাবার আমার কথা ভাবলে নাহ, তোমার মনার কথা ভাবলে না, কি করে ভাবলে যে তোমাকে ছাড়া মনা অন্য কারো বউ হবে এক অচেনা মানুষ কে বিয়ে করেব, যে মনার বেচে থাকা আর সমস্ত অস্তিত্বের সাথে সরল আর সরলের ভালোবাসা, সরলকে ছাড়া মনার একটাদিনও চিন্তা করা হারাম সেই মনা চিরদিনের মত সরল কে ছাড়া অন্য মানুষ কে বিয়ে করে সুখে থাকবে, সরল ফিরে এসো, ফিরে এসে সরল, তোমার মনা সব ছেড়ে আজ তেমার কাছে চলে এসেছে ফিরে এসো সরল।
আমার সেদিনের কাঁন্নাতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে গিয়েছিলো, সেদিন আমি কতটা অসহায় ছিলাম সেই অসহায়ত্ব আজ তোমাকে হতে দেখলাম সরল, যখন তুমি ট্রেনের ক্যন্টিনে সিগারেট খেতে গেলে আমি তোমার পিছুপিছু গিয়েছিলাম, যা দেখলাম তা কেমল আমার সেই দিনের অসহায়ত্বের কথা মনে করে দিচ্ছিল, তুমি এক হাতে চা আর অন্য হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে অসহায়ের মত ক্যন্টিনের জানালার পাশে দাড়িয়ে আছো আর তোমার সিগারেটের আগুনে হাত পুড়ে যাচ্ছে তাতে তোমার কোন ভূক্ষেপ নাই।
তখনও তোমাকে ক্ষমা করতে পারিনি আর কখনও তোমাকে ক্ষমা করার প্রশ্ন আসে না সরল!
হঠাৎ আমার ছেলে শুভ্র এর হাত আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলছে আম্মু জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ট্রেনের আঙ্কেলর মত একই রকম করে কাঁদছো কেন – সেই আঙ্কেল টা কে?
শুভ্র এর দিকে না তাকিয়ে বললাম – তিনি আমার সরল মামা!
[ উৎসর্গ- সন্মানিতা জান্নাতি পাপিয়া আপনাকে! ]