পাকিস্তানের একজন অর্থ বিশ্লেষক জায়গাম খান সম্প্রতি দেশটির একটি টকশোতে বলেছেন, খোদা কি ওয়াস্তে হামে বাংলাদেশ বানা দো, ৫ সাল নেহি, ১০ সালছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে পাকিস্তানের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে ঠাঁই নিয়েছে একসময় তাদের হাতে শোষিত বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি এখন আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু পাকিস্তানের কাছে নয়, পুরো বিশ্বের কাছে এখন রোল মডেল এই দেশ। সদ্য প্রকাশিত ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮’ তেও বাংলাদেশ তার সফলতা দেখিয়েছে। ৩ ধাপ এগিয়ে ১৮৯ দেশ নিয়ে করা এইচডিআই সূচকেও অগ্রগতি বাংলাদেশের। পাকিস্তানকে তো বটেই, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সূচকটিতে যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ১৩০ ও ১৫০ সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। প্রত্যাশিত আয়ু : ইউএনডিপির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গড় আয়ু ৬৮ দশমিক ৮ বছর। আর পাকিস্তানের ৬৬ দশমিক ৬ বছর। ভারতে নারীদের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৪ আর পুরুষদের ৬৭ দশমিক ৩। অন্যদিকে বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৬ আর পুরুষদের ৭১ দশমিক ২। এছাড়া পাকিস্তানের নারীদের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ৬৭ দশমিক ৭ ও পুরুষের আয়ু ৬৫ দশমিক ৬ বছর। শিশু মৃত্যু : মানব উন্নয়ন সূচক ২০১৮ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সদ্যোজাত শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ দশমিক ২ জন। অন্যদিকে ভারতে এই হার ৩৪ দশমিক ৬ জন। আর পাকিস্তানে ৬৪ দশমিক ২ জন। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩৪ দশমিক ২ জন। ভারতে এই হার ৪৩ জন আর পাকিস্তানে ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ। টিকাদান কর্মসূচি : ভারতে শতকরা ৯টি সদ্যোজাত শিশু প্রয়োজনীয় ডিপিটি টিকা থেকে বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশে এই সংখ্যা মাত্র ১ জন। পাকিস্তানে যা ১৭ জন। ভারতে হামের টিকা থেকে বঞ্চিত হয় শতকরা ১২ জন সদ্যোজাত শিশু। বাংলাদেশে এই সংখ্যা মাত্র ৬ জন আর পাকিস্তানে ২৪ জন। অপুষ্টি : ভারতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টির হার ৩৭ দশমিক ৯। বাংলাদেশে এই হার ৩৬ দশমিক ২ আর পাকিস্তানে ৪৫ শতাংশ। এইডসের প্রাদুর্ভাব : ভারতে প্রতি ১০০ জনে এইচআইভি আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ৩। অন্যদিকে বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ১। আর পাকিস্তানেও এই হার বাংলাদেশের সমান। ম্যালেরিয়ার প্রকোপ : বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার প্রতি হাজারে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ জন। ভারতে এই হার ১৮ দশমিক ৮ জন। আর পাকিস্তানে ১০ দশমিক ৬ জন। মৃত্যু হার : ভারতের প্রতি হাজারে নারী মৃত্যুর হার ১৩৯ জন। বাংলাদেশের এই হার প্রতি হাজারে ১০৭ জন। আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ১৪০ জন। ভারতে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২১২ আর বাংলাদেশে ১৪৮, পাকিস্তানে যা ১৭৮ জন। বৈষম্য : ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের হার ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানে যা ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ। ভারতে আয় বৈষম্যের শিকার হয় শতকরা ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ আর বাংলাদেশে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর পাকিস্তানে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট : জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (জিডিআই) এ ভারতের স্কোর শূন্য দশমিক ৮৪১। এই সূচকেও ভারতের থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৮৮১। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের স্কোর শূন্য দশমিক ৭৫০। ভারতে পার্লামেন্টে নারীর আসন ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। পাকিস্তানে তা ২০ শতাংশ। কর্মসংস্থান : ভারতে মোট জনসংখ্যার ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। বাংলাদেশে এই হার ৫৪ শতাংশ। পাকিস্তানে এই হার ৫২ শতাংশ। নিরাপত্তা : ভারতে প্রতি লাখে হত্যার শিকার হয় ৩ দশমিক ২ জন। বাংলাদেশে এই সংখ্যা ২ দশমিক ৫ জন। আর পাকিস্তানে ৪ দশমিক ৪ জন। ভারতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুহারা হয় প্রতি ১০ লাখে ৪৬১ জন। বাংলাদেশে এই সংখ্যা ১৩১ জন। পাকিস্তানে যা ৭২ জন। ভারতে নারীদের আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ১৪ দশমিক ২ জন। বাংলাদেশে যা ৬ দশমিক ৬ জন আর পাকিস্তানে ২ দশমিক ৪ জন। রেমিটেন্স : ভারতের প্রবাসী আয় জিডিপির ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এই হার ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর পাকিস্তানের এই হার ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পরিবেশের ভারসাম্য : ভারত মাথাপিছু ১.৭ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর বাংলাদেশ ০.৫ টন। এছাড়া পাকিস্তান ০.৯ টন কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন করে থাকে। বায়ু দূষণের প্রভাবে ভারতে মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৮৪ দশমিক ৩ জন। বাংলাদেশে এই হার ১৪৯ জন। পাকিস্তানে যা ১৭৩ দশমিক ৬ জন। দূষিত পানি ও পয়নিষ্কাশন অব্যবস্থাপনার কারণে ভারতে মৃত্যু হয় লাখে ১৮ দশমিক ৬ জনের। বাংলাদেশে এই হার ১১ দশমিক ৯ জন আর পাকিস্তানে ১৯ দশমিক ৬ জনের। আর্থ-সামাজিক অবস্থা : বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ২ ভাগ দক্ষ শ্রমিক। ভারতে এই হার ১৮ দশমিক ৫। আর পাকিস্তানে ২৮ দশমিক ৩ ভাগ। বাংলাদেশে মোট জাতীয় আয়ের বিপরীতে সঞ্চয়ের হার ২৬ শতাংশ। ভারতে এই হার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। পাকিস্তানে যা ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ।