কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ব্রেক্সিটের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির আজকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার রাতে নানা নাটকীয়তার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে ৩১২ জন সংসদ সদস্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, আর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩০৮ জন।
তবে এই ভোটাভুটির কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, এই ভোটাভুটির মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর থেরেসা মে’র সরকার বলছে, এবার পার্লামেন্ট সদস্যদের আরেকটি ভোট দিতে হবে। আর সেটি হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার যে সময় নির্ধারিত করা আছে, সেটি আরো পিছিয়ে দেওয়া হবে কিনা?
আগামী ২৯ মার্চ ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত দিন রয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ভোট দিতে পারেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। সেই সময়টি স্বল্প সময়ের জন্য হতে পারে আবার বেশ খানিকটা সময় নিয়েও হতে পারে। তারপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলবেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ব্রেক্সিটের খসড়া বিল সংসদে উপস্থাপন করে পরাজিত হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আনা খসড়াটি ৩৯১-২৪২ ভোটে ব্যবধানে প্রত্যাখ্যান করেন। অর্থাৎ ১৪৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় টেরিজা মের এই খসড়া চুক্তি।
গত ১৫ জানুয়ারি প্রথম ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের আনা একটি বিল বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। তার পর আস্থা ভোটের মুখোমুখি হন থেরেসা মে। সেটি কোনোমতে উতরে যান তিনি। এর পর থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে ব্রেক্সিটের ‘ব্যাকস্টপ’ ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা চালান থেরেসা মে। তারপরই তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেক্সিটের খসড়া বিল উত্থাপন করেছিলেন পার্লামেন্টে।
ব্রিটেনের পাশেই রয়েছে স্বাধীন আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ। ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত রয়েছে। ব্যাকস্টপ হলো, এই সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার নিশ্চয়তা। আর উন্মুক্ত রাখার অর্থই হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের অধীনে থাকা। যুক্তরাজ্য যদি ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে এই সীমান্ত কেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের অধীনে থাকবে—তা নিয়েই জটিলতার সূচনা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দীর্ঘ দেন-দরবারের পর কিছুটা পরিবর্তিত আকারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খসড়া বিলটি সংসদের এনেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ব্যাকস্টপে এখন বলা হয়েছে, এই দুই ভূখণ্ডের মধ্যে অবাধ যাতায়াত হবে সাময়িক।
যদিও এসব পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, এবার প্রধানমন্ত্রীর উচিত সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া, অর্থাৎ ‘ব্রিটিশ এক্সিট’ নামটিকেই সংক্ষেপে ‘ব্রেক্সিট’ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ব্রিটেন ৪০ বছরের বেশি সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ছিল। এর মাধ্যমে ব্রিটেনে বসবাসরত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশের বাসিন্দারা বিশেষ সুবিধা ভোগ করতেন। কিছু ব্রিটিশ রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকরা মনে করেন, এটা তাদের অর্থনীতির উপর অযথা চাপ তৈরি করছে।
এই ইস্যুতে সামনে রেখেই ২০১৬ সালের ২৩ জুন একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। সেই ভোটে ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা উচিত কিনা?
সেই গণভোটে ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে। আর থাকার পক্ষে ছিল বাকি ৪৮ শতাংশ ভোট। এরপর থেকেই এই ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু হয় ব্রিটেনের রাজনৈতিক শরগোল।
একজন প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যান, থেরেসা মের নেতৃত্বে আগাম ভোট হয়, কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। আগামী ২৯ মার্চ ব্রেক্সিটের সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা এখনও এ ব্যাপারে একমত হতে পারছেন না।
সূত্র : এন টি ভি