তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারে ৬ বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অদ্য রোজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে তাঁদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এতে সভাপতিত্ব করেন।
মৌলভীবাজারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয়, শাড়ি ও স্যুভেনিয়র প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
এসময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, খোদেজা খাতুন, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মল্লিকা দে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল হক, সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় ৬৫ জন এবং সারাদেশে ভার্চুয়ালি ৬৫৪ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। জেলা, উপজেলাসহ দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা, ওষুধ, টেস্ট— যা প্রয়োজন তার সবই প্রদান করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের জায়গায় শিশু পার্ক নির্মাণ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্দিষ্ট স্থানমুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে সংরক্ষণ করতে চাই। যেখানে মানুষ গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল, সেসব স্থান আমরা সংরক্ষণ করছি। বধ্যভূমিগুলোও আমরা সংরক্ষণ করছি। এছাড়া যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা মারা যান, তাদের একই ডিজাইনের কবর দেওয়া হবে, যেন ৫০ বছর পরেও একটি কবর দেখে বোঝা যায়, এটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর।
এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরু থেকেই, সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা এবং আত্মসম্ভ্রম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরজ্জ্বোল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগ অপরিসীম। বিধবা হতে পারে জেনেও স্ত্রীরা স্বামীদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন। পুত্রহারা হতে পারেন জেনেও মায়েরা পুত্রদেরকে রণক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন। নির্যাতিত হতে পারেন জেনেও কন্যারা অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী একসঙ্গে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক সম্মাননা প্রদান করা হয়নি। এবারই আলাদাভাবে বাংলাদেশের সব নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একই দিনে, একই সময়ে, একইসঙ্গে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান: একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।’