তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: সামাজিক অবক্ষয়ের আরেক নাম টিকটক। ছোট ভিডিও তৈরির জন্য তরুণ-তরুণীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এই অ্যাপসের কারণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও অনেক ক্ষেত্রে এই এপসের কারণে হচ্ছে কল্যাণও। টিকটকে যারা ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের বলা হয় টিকটকার৷ সমাজে টিকটকারদের বখে যাওয়া বাজে দৃষ্টি ভঙ্গিতে তরুণ-তরুণী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়৷ তাদের অনেক কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত কন্টেন্টের কারণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার ফলে এই টিকটকাররা অনেক সময় পত্রিকার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হন দেখা মিলে৷
তবে সমাজের চোঁখে বখে যাওয়া টিকটকারদের কারনে হচ্ছে সমাজের কল্যাণও ৷ তেমনি এক কল্যাণজনক কাজ করছেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার টিকটকাররা। তাদের সহযোগিতায় পাকা ঘর পাচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মুন্না নামের এক অসহায় যুবক৷ তারা নিজেরা দেশ বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাকে দুই রুমের একটি পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। নিজেদের তথ্যাবধানে তৈরি হচ্ছে সেই ঘর।
সংলিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বড়তল গ্রামের মৃত মজম্মিল আলীর ছেলে মুন্না ৷ পুরো নাম মুন্না আহমদ। জন্মের পর থেকেই মুন্না বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। টিকটক মুন্না হিসাবে যার পরিচিত সবখানে। টিকটক মুন্না নাম বললেই মোটামুটি অনেক মানুষেই কাছে পরিচিত এবং সবাই তাকে চিনেন। টিকটকের কল্যাণে রাতারাতি যার পরিচিত ছাড়িয়ে গেছে দেশ বিদেশে। মুলত টিকটকাররা তার সাথে ভিডিও তৈরি করে টিকটক অ্যাপে আপলোডের মাধ্যমে তার পরিচিত বৃদ্ধি পায় ৷ তার অগোছালো মজার মজার সংলাপ মানুষকে বিনোদিত করে৷ যার ধরুন তার ভিডিও গুলো সহজেই টিকটকে ভাইরাল হয়৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত টিকটকাররা তার সাথে টিকটক ভিডিও বানাতে তার বাড়িতে ছুটে আসেন। তবে সবার প্রিয় এই টিকটক মুন্নার পারিবারিক অবস্থা করুন। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুন্নার থাকার নেই নিজের কোন ঘর। থাকেন ছোট ভাইয়ের সাথে। আর তাই মুন্নার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাকে নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি করা টিকটকাররা৷ নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে তৈরি করে দিচ্ছেন পাকা বাড়ি ৷ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে মুন্নার পাকা ঘর তৈরির কাজ।
সরেজমিনে মুন্নার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাজমিস্ত্রীরা কাজ করছেন। বর্তমানে ঘরের বেজমেন্টের কাজ চলছে। পাঁচ ছয়দিন থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এক সাথে তিনজন মিস্ত্রি কাজ করছেন৷ দুই রুম, রান্না ঘর এবং একটি বাথরুম তৈরি করা হবে ৷ ঘরের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লক্ষ টাকা ৷
এসময় কথা হয় মুন্নার বড় ভাই আলতাফ হোসেনের সাথে তিনি বলেন, মুন্নার সাথে যারা টিকটক ভিডিও তৈরি করেন তারা মুন্নাকে একটি ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। পাঁচ ছয়দিন থেকে কাজ শুরু হয়েছে৷ আমি টিকটকারদের ধন্যবাদ জানাই। তারা আমার ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে ঘর বানানোর পর মুন্নাকে তারা বিয়েও দিয়ে দিবে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মুন্না বলেন, আমার ঘরের কাজ চলছে ৷ রাজমিস্ত্রীরা কাজ করছেন ৷ আমার ঘর তৈরি করতে দেশ বিদেশের ভাই বন্ধুরা যারা সহযোগিতা করছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই ও দোয়া করি।
এ বিষয়ে ৮নং সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম বলেন, মুন্নাকে টিকটকাররা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন এটা নিসন্দেহে ভালো কাজ ৷ তার নিজের কোন ঘর নেই এবার তার নিজের একটি ঘর হবে এজন্য ধন্যবাদ তাদেরকে যারা তাকে সহযোগিতা করছেন৷
তিনি আরও বলেন, আমি শুনেছি মুন্নাকে দিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ সংলাপ বলানো হয় ৷ এটা খুব খারাপ জিনিস। সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, কি বলছে তার নিজের কোন খেয়াল নেই ৷ তাকে দিয়ে যা বলানো হচ্ছে তাই সে ঠিক ভুল না ভেবে বলে যাচ্ছে। তাকে নিয়ে যারা কুরুচিপূর্ণ ভিডিও বানায় তাদেরকে অনুরোধ করবো এমন ভিডিও যেনো তারা না তৈরি করে ৷ এতে সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের ক্ষতি হয়।