মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ মুরাদনগর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ উন্নত জাতের বীজ চাষ হওয়ায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে অধিকাংশ সরিষাক্ষেতে ফুল ফুটেছে। সুন্দর বীজও আসতে শুরু করেছে। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। লাভের আশায় তাদের মুখে এখন হাসি। বিভিন্ন উপজেলায় জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফুলে মধু আহরণে ভিড় করছে মৌমাছি। আমন ফসল ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ে সরিষা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সরিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর চাষাবাদি জমির মধ্যে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের ৪ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের টার্গেট থাকলেও চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৬১৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর কৃষকরা উপজেলা সদর, করিমপুর, ইউছুফনগর, দিলালপুর, নেয়ামুতপুর, নোয়াগাও, কামাল্লা, রামচন্দ্রপুর, শ্রীকাইল, রোয়াচালা, কুড়াখাল, বড়িয়াচরা, মোহাম্মদপুর, দিঘিরপাড়, রগুরামপুর, পুষ্কনিরপাড়, চৈনপুর, মোচাগড়া, দেওরাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টরি ৭, বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বিনা ৪, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৭, জাতের সরিষা চাষ করেছে। হেক্টর প্রতি সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ৭/৮ টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
করিমপুর মাঠের কৃষক লতু মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তাদের জমি পরিত্যক্ত থাকতো, কিন্তু বর্তমানে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এখন বোরো ধানের আগে জমিতে সরিষা চাষ করছেন। সরিষার ফুল মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তিনি আরও বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এত বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করি তা থেকে প্রায় বিঘা প্রতি ৮ মন সরিষা পাওয়া যাবে, যার বাজার মূল্য হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইন উদ্দিন আহমেদ জানান, কৃষকদের যথার্থ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছর ‘বারি ১৪’, ‘বিনা-৯ ও ‘বিনা-৪ জাতের সরিষা বেশি চাষ হতো। এ বছর চাষিরা যেন অধিক লাভবান হতে পারে সেজন্য ‘বারি ১৭’ এর পাশাপাশি প্রায় ৩শ জন চাষিকে সুপার কোয়ালিটি ‘বারি ১৮’ জাতের সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের ন্যায় কৃষকের মাঝে তেল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি ও ডাল, তেল, মসলা বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৯টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ সেবা দিয়েছেন। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কৃষকদের পরিশ্রম আর সরকারি কৃষি অফিসের সমন্বয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।